সোমবারই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ক্রান্তি। মঙ্গলবার সেই ক্রান্তি ফাঁড়ির সামনে পুলিশকর্মীরা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
আমি ক্রান্তি বাজার লাগোয়া ধলাবাড়ি গ্রামের ভূমিপুত্র। জন্মকর্ম সব আমার এখানে। এই এলাকার মানুষকে সেবা করেই আমার পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়া। কিন্তু সোমবার আমার এই ক্রান্তিতেই যা ঘটে গেল, তা ভাবলেই আমার গা শিউড়ে উঠছে। ছেলেধরা সন্দেহে পাঁচ জনকে পুলিশ আটক করে ফেলার পরেও তাদের জনতার হাতে তুলে দেবার দাবিতে যে ধরনের আন্দোলন দেখলাম তা আগে কখনও আমার গ্রামে দেখিনি। পাথর আর ইট যেন বৃষ্টির মতো চারদিক থেকে পড়ছিল।
অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বিপদ জেনেও নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। ফাঁড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে কোনওমতে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা শুরু করতে চলে যাই। কিন্তু এত আওয়াজ হচ্ছিল যে আমার কথা শুনতে পাওয়া তো দূরের কথা, আমাকে কেউ দেখতেও পায়নি। আচমকাই আমার পায়ে ঢিল এসে লাগে, প্রচণ্ড যন্ত্রণায় আমি লুটিয়ে পড়তেই পিঠে আর একটি ঢিল এসে লাগে। কিন্তু বাইক রাস্তায় থাকলেও একটা ঢিলও সেখানে লাগেনি।
আমার গ্রামের বাসিন্দাদের আমি খুব ভাল করে চিনি। তাঁরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। পুলিশ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছে দেখেও তাঁরা ফাঁড়িতে চড়াও হবেন, তা আমি বিশ্বাস করি না। এখানে নিশ্চয়ই কোনও প্ররোচনা রয়েছে। ছেলেধরা এলাকায় ঘুরছে কি না, তা দেখা তো পুলিশের কাজ। তাহলে মানুষ এ ভাবে আইনকে নিজের হাতে নিতে গেল কেন, সেটা এখন আমাদের কাছে বড় প্রশ্ন। এর পেছনে কি প্ররোচনা থাকতে পারে?
ইন্টারনেটেও নাকি গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সব আমরা সেকেলে মানুষ বুঝি না কিন্তু নতুন প্রজন্মকে আসল, নকলের তফাত শেখাতেই হবে। জখম হয়েও আমি তাই দমে যাচ্ছি না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে এলাকা শান্ত করাই আমার প্রধান কাজ। এলাকা যে আবার শান্ত হবেই সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
(লেখক পদ্ম সম্মানপ্রাপ্ত)