মহিলার ডাকে অপহরণের চক্র ফাঁস

মহিলাকে দিয়ে ফোন। ‘রং নম্বরে’র ছুতোয় আলাপ। তার পরে ভাব জমিয়ে ডাক গোপন আস্তানায়। সেই ডাকে সাড়া দিলেই ব্যস! জালে পড়ত ‘লক্ষ্য’, অর্থাৎ ব্যবসায়ী। তাঁকে অপহরণ করত দুষ্কৃতীরা। এর পরেই অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া হত পরিবারের কাছে। এমন কায়দাতেই মালদহে কয়েক মাস ধরে অপহরণের একটি চক্র চলছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০২:৪৬
Share:

মহিলাকে দিয়ে ফোন। ‘রং নম্বরে’র ছুতোয় আলাপ। তার পরে ভাব জমিয়ে ডাক গোপন আস্তানায়। সেই ডাকে সাড়া দিলেই ব্যস! জালে পড়ত ‘লক্ষ্য’, অর্থাৎ ব্যবসায়ী। তাঁকে অপহরণ করত দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

এর পরেই অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া হত পরিবারের কাছে। এমন কায়দাতেই মালদহে কয়েক মাস ধরে অপহরণের একটি চক্র চলছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। রবিবার সন্ধেয় ইংরেজবাজারের আমবাজারে বীরভুম জেলার এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার চেষ্টার অভিযোগে এক মহিলা সহ দু’জনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় বাসিন্দা। তখনই এই ঘটনা সামনে আসে।

পুলিশ ওই মহিলা-সহ তার একসঙ্গীকে গ্রেফতার করে সোমবার পেশ করে মালদহ জেলা আদালতে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার নাম কাশ্মীরা বিবি। তিনি ইংরেজবাজার থানার লক্ষীপুরের ধানতলা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গী পশুপতি রজক ইংরেজবাজারের রামেশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুইজন ছাড়াও আরও পাঁচজন তাদের সঙ্গে ছিল। মালদহের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, ‘‘ঘটনার সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হবে।’’

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত মাস দুয়েক আগে। ইংরেজবাজারের কুলিপাড়ার এক যুবক রথবাড়ি এলাকা থেকে অপহৃত হন। তার পরেই পরিবারের লোকেদের ফোন করে তিন লক্ষ টাকা দাবি করে দু্ষ্কৃতীরা। চারদিন বাদে ওই যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তখন কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই যুবককে প্রেমের টোপ দিয়ে কালিয়াচকে ডেকে পাঠায় এক মহিলা। তার পরেই ওই মহিলার সঙ্গীরা গিয়ে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায় গোপন ডেরায়। ওই যুবককে উদ্ধারের পর থেকেই সতর্ক ছিল পুলিশ।

সুযোগও এসে যায়। এনে দেন বীরভূমের মুরারইয়ের বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা কিরণ শেখ। তিনি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মেলাতে নাগরদোলা গাজলের পান্ডুয়াতেও তিনি মেলাতে নাগরদোলা বসিয়েছেন। দশদিন আগে কিরণকে অচেনা নম্বর থেকে ফোন করেন এক মহিলা। তারপরেই দু’জনের মধ্যে আলাপ জমে ওঠে। রবিবার সন্ধেয় মহিলার সঙ্গে দেখা করতে বীরভূম থেকে মালদহে আসেন কিরণ। পরিচয় হয় ওই মহিলা কাশ্মীরা বিবির সঙ্গে। কাশ্মীরা কিরণকে নিয়ে যায় সাদা রঙের একটি অ্যাম্বাসাডারের কাছে। গাড়িতে উঠতেই কিরণ দেখেন ছ’জন বসে রয়েছেন। তিনি উঠতে অস্বীকার করলে তাঁকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। কিরণের চিৎকারে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গাড়িটি পালিয়ে গেলেও ওই মহিলা এবং তাঁর এক সঙ্গী পশুপতি রজককে ধরে ফেলেন তাঁরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের আটক করে নিয়ে আসে।

ইংরেজবাজার থানাতে গিয়ে কিরণ শেখ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘‘দশদিন আগে আমাকে ফোন করে ওই মহিলা। আমাকে বলে আমার কাছে সে আট লক্ষ টাকা পাবে। আমি হকচকিয়ে যাই। দেখা করতে বলে আমাকে। তাই এদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসি। সেই সময়ই আমাকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। গ্রামবাসীদের তৎপরতায় বেঁচে গিয়েছি।’’ যদিও ওই মহিলা পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী তার কাছ থেকে টাকা পাবেন। সেই টাকা নেওয়ার জন্য আমি তাঁকে ফোন করে ডেকে ছিলাম। অপহরণের কোনও উদ্দেশ্য ছিল না আমাদের।’’

পুলিশ জানিয়েছে, অন্য ঘটনার সঙ্গে এই চক্রের কোন যোগাযোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি আইনজীবী জয়ন্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এ দিন ধৃতদের পাঁচ দিনে হেফাজতে চেয়ে পুলিশ আদালতে পেশ করেছিল। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম শর্মিষ্ঠা ঘোষ তিনদিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।’’ ইংরেজবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুই ধৃতকে জেরা করে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement