কোচবিহার বিমানবন্দরে নামল বিমান। বৃহস্পতিবার হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।
দীর্ঘদিন টালবাহানার পরে অবশেষে চালু হল কলকাতা-কোচবিহার উড়ান পরিষেবা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কোচবিহার বিমানবন্দরে নামল স্পিরিট এয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের নয় আসনের একটি বিমান। এ দিন বেলা ১টা নাগাদ কলকাতা থেকে বাগডোগরা হয়ে কোচবিহারে পৌঁছয় বিমানটি। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সাড়ে ১২টা নাগাদ বিমানটি নামার কথা থাকলেও ঠিক মতো সিগন্যাল না মেলায় একটু দেরি হয়। আধঘণ্টা পর ফের বিমানটি কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়।
বিরোধীদের দাবি, বিধানসভা ভোটের মুখে কোচবিহারের বাসিন্দাদের মন জয় করতে ভর্তুকি দিয়ে ওই বিমান চালাচ্ছে সরকার। সঠিক কোনও পরিকল্পনা না নিয়েই এই পরিষেবা চালু করা হয়েছে। বেশি দিন এই পরিষেবা স্থায়ী হবে না। বিমান সংস্থার পক্ষে জানানো হয়েছে, ভর্তুকি দিয়ে ওই বিমান চলাচল শুরু হলেও তাঁরা লাভের আশা করছেন। কিন্তু নয় আসনের একটি বিমান চালিয়ে কী ভাবে তা হতে পারে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বিমান সংস্থার কর্তারা। সংস্থার পক্ষে জ্যোতির্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই মুহূর্তে লাভ-ক্ষতির হিসেব করা সম্ভব নয়। আমরা সমীক্ষা করেই নেমেছি। যদি যাত্রীসংখ্যা ঠিক থাকে এবং আগামী দিনে চাহিদা বাড়ে তাহলে লাভ অবশ্যই হবে।” শাসক দলের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এ দিন ওই বিমানে কলকাতা থেকে কোচবিহার ফেরেন। তার দাবি এবারে বিমান চলাচল স্থায়ী হবে। কারণ ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।”
বিমানসংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, নয় আসনের ওই বিমানটি কোচবিহার-বাগডোগরা-কলকাতা-দুর্গাপুর যাতায়াত করবে। আপাতত সপ্তাহে চার দিন অর্থাৎ মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার বিমানটি যাতায়াত করবে। কোচবিহার থেকে কলকাতার ভাড়া চার হাজার টাকা। কোচবিহার-বাগডোগরা ভাড়া দেড় হাজার টাকা। যাত্রীদের সুবিধের জন্য ‘ডোর টু ডোর’ পরিষেবাও চালু হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাড়ার পরিমাণ একটু বেশি হবে।
কোচবিহার বিমানবন্দরে যে রানওয়ে রয়েছে তাতে ১৯ আসনের বিমান চালানো যেতে পারে। এর থেকে বেশি হলে সেক্ষেত্রে রানওয়ে আরও বড় করতে হবে। সংস্থার পক্ষে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, যদি টিকিটের চাহিদা থাকে তাহলে প্রথমে ওই নয় আসনের বিমান পরিষেবা চার দিনের বদলে সাত দিন করা হবে। পরবর্তীতে ১৯ আসনের বিমান নামানো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে।
যাত্রীদের অনেকেই অবশ্য, নয় আসনের বিমান চালানো নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন। এমনকি তাঁরা সরাসরি কোচবিহার–কলকাতা উড়ানের দাবিও করেছেন। কোচবিহার ডিসট্রিক্ট চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক রাজেন বৈদ এ দিন ওই বিমানে কোচবিহার থেকে কলকাতা যান। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি এক দু’দিনেই বন্ধ না করে বিমান পরিষেবা ধারাবাহিক করা উচিত। তাতেই চাহিদা বাড়তে শুরু করবে। তবে সরাসরি কোচবিহার-কলকাতা উড়ান চালু হলে চাহিদা আরও বাড়বে।”
তবে একবার বন্ধ হওয়ার পরে ফের উড়ান চালুর পরে সরকারকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী অনন্ত রায় বলেন, “এটা ভোটের চমক ছাড়া কিছুই নয়। এখানে পরিকল্পনার অনেক অভাব রয়েছে। তার পরেও ধারাবাহিকভাবে বিমান চালানো হলে আমরা স্বাগত জানাব।” এ দিন বিমানবন্দরে জেলাশাসক পি উল্গানাথান এবং পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জানান, বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন।
১৯৯৫ সালে কোচবিহারের উড়ান পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে নর্থইস্ট শাটল নামে একটি সংস্থা বিমান পরিষেবা চালু করে। এক মাস পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের মে মাসে পরীক্ষামূলক ভাবে উড়ান চললেও বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়নি। এবারে ফের বাণিজ্যিক ভাবে বিমান চলাচল শুরু হল।