পুরপ্রধান নির্বাচিত হওয়ার পরে তৃণমূলের মালদহের পর্যবেক্ষক সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কৃষ্ণেন্দুবাবু। —নিজস্ব চিত্র।
চতুর্থবারের জন্য মালদহের ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। মঙ্গলবার পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে ১৫ জন তৃণমূল কাউন্সিলরের ভোট পেয়ে জয়ী হন তিনি। এ দিন চেয়ারম্যান পদের জন্য মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরোধিতা করেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নীহার ঘোষ। তাঁকে সমর্থন করেন বিজেপির তিন কাউন্সিলর। তবে ভোটাভুটিতে যোগ দেননি কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলর। ফলে ২৯টি ভোটের মধ্যে ১৫টি ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়া করণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু। এ দিন বেলা তিনটে নাগাদ তাঁকে চেয়ারম্যান হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান মালদহের মহকুমা শাসক (সদর) নন্দিনী
ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯টি ওর্য়াডের মধ্যে একক ভাবে ১৫টি ওয়ার্ডেই জিতেছিল তৃণমূল। বামেদের দখলে থাকে সাতটি এবং বাম সমর্থিত নির্দল পায় দুটি ও বিজেপি তিনটি। কংগ্রেস পায় দুটি ওর্য়াড। একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকায় বোর্ড গঠনের দৌড়ে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে নির্বাচনের আগে কৃষ্ণেন্দুবাবু এবং দুলাল সরকারকে সামনে রেখে লড়াই করায় ফলাফল বের হতেই চেয়ারম্যান কে হবেন তা নিয়ে দলের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণেন্দুবাবুর একাধিক পদ রয়েছে বলে দাবি করে চেয়ারম্যান হিসেবে অন্যকে বসাতে চান দলের একাংশ কাউন্সিলর। এমন সময়ে মালদহে আসেন বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের এক কাউন্সিলর গোপনে দেখা করেন করে বিজেপি নেতারা দাবি করেছিলেন। এর জেরে জেলার রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে। কলকাতায় সমস্ত কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়ারম্যান হিসেবে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবুর নাম আগাম না জানানোয় জল্পনা আরও বাড়ে। অবশেষে সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সোমবার রাতে ইংরেজবাজারের তৃণমূলের ১৫ জন কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন দলের জেলার পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। বৈঠক শেষে তিনি হুইপ জারি করে বলেন চেয়ারম্যান হবেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু এবং ভাইস চেয়ারম্যান হবেন দুলাল সরকার। দলের হুইপ মেনেই এ দিন তৃণমূলের সমস্ত কাউন্সিলরেরা চেয়ারম্যান হিসেবে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবুকে জয়ী করেন। কৃষ্ণেন্দুবাবু চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিতেই কর্মী সমর্থকেরা বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণেন্দুবাবু প্রথম চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ১৯৯৫ সালে। এরপর ২০০০ ও ২০১০ সালে চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। চতুর্থবারের জন্য চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘‘আমার দায়িত্ব আরও বাড়ল। পুরসভার সার্বিক উন্নয়নই হবে আমার মুল লক্ষ্য।’’
বিজেপির সমর্থন করলেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২টি ভোট পেয়ে হেরে যান বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নীহার ঘোষ। এ বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘আমরা বামেদের সমর্থন করিনি। নীহারবাবু নির্দল প্রার্থী হওয়ায় আমরা তাঁকে সমর্থন করেছি।’’ তবে কংগ্রেস ভোট বয়কট করায় বিরোধীদের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা ভোটাভুটিতে যোগ না দিয়ে কি তৃণমূলকে বাড়তি সুবিধে করে দিয়েছে?’’ এ বিষয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদক নরেন্দ্র নাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি পুরসভাতে আমাদের দল ভোটে যোগ দেয়নি। তাই দলের নির্দেশে আমরাও এখানে অংশ নিইনি। কারণ আমাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই। এতে কে সুবিধা পাবে তা ভেবে এই সিন্ধান্ত নিইনি।’’ এই বিষয়ে তৃণমূলের দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, ‘‘একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে এই প্রথম আমরা পুরসভার দখল নিয়েছি। এ জন্য আমরা খুবই খুশি। আর ভোট বয়কট করার জন্য আমরা কাউকে অনুরোধ জানাইনি। হতে পারে তাঁরা এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের বিরোধিতা করেন নি।’’