পাতা তোলা নয়, পাথর ভাঙাই কপাল শ্রমিকদের

সকালে লাইন দিয়ে কাজে যাচ্ছিলেন তরাইয়ের গঙ্গারাম চা বাগানের একদল শ্রমিক। পিঠে থলের বদলে সকলের হাতে হাতুড়ি। কেন? বাগানের স্থায়ী কর্মী বলরাম শর্মার উত্তর, ‘‘জানুয়ারি মাস থেকে বেতন পাইনি। কবে বেতন হবে, তার ঠিক নেই। সংসার চালাতে তাই নদীতে পাথর ভাঙার কাজ করছি।’’ 

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী 

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
Share:

বেহাল: গঙ্গারাম চা বাগানের কারখানা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

সকালে লাইন দিয়ে কাজে যাচ্ছিলেন তরাইয়ের গঙ্গারাম চা বাগানের একদল শ্রমিক। পিঠে থলের বদলে সকলের হাতে হাতুড়ি। কেন? বাগানের স্থায়ী কর্মী বলরাম শর্মার উত্তর, ‘‘জানুয়ারি মাস থেকে বেতন পাইনি। কবে বেতন হবে, তার ঠিক নেই। সংসার চালাতে তাই নদীতে পাথর ভাঙার কাজ করছি।’’

Advertisement

বাগানের কারখানা পেরিয়ে শ্রমিক মহল্লার দিকে এগোতেই দেখা গেল, ছোট্ট জটলা। জিজ্ঞাসা করতে জবাব এল, অমিত কিন্ডো নামে এক শ্রমিকের আত্মীয় অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার। তা জোগার করতেই শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন অমিত।

একটু খাওয়ার জল চাইতেই চুপ শ্রমিকেরা। শেষে সুমিত্রা সউরিয়া নামে এক শ্রমিক জানান, বাগানের সজলধারা প্রকল্পের টিউবওয়েল দিয়ে জল পড়ে না অনেক দিন। কারখানা থেকে নির্দিষ্ট সময় জল সরবরাহ করা হত। বিল বকেয়া থাকায় ডিসেম্বরে কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। তাই পাম্প চলছে না। ফলে বন্ধ ওই জলের সরবরাহ। বাধ্য হয়েই কুয়োর অপরিশুদ্ধ জল খাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

এই ভাবেই উঠে এল একের পর এক সমস্যা। টুনা, গঙ্গারাম, মুনি ও তারাবাড়ি গঙ্গারাম চা বাগানের চার ডিভিশনে স্থায়ী, অস্থায়ী মিলিয়ে ৮ হাজারেরও বেশি শ্রমিক আছেন। সব শ্রমিকই বলরাম, অমিত বা সুমিত্রাদের মতো দিন কাটাচ্ছেন।

রাজ্য শ্রম দফতর ও টি বোর্ডে সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে, উত্তরবঙ্গে এখন বন্ধ বাগানের সংখ্যা ১৩। ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে আরও ১৫টি। শ্রমিকেরা বলছেন, অথচ প্রতিশ্রুতি তো কম শোনা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি টি বোর্ড ডুয়ার্সের ৭টি বাগান অধিগ্রহণ করার কথা ঘোষণা করে। কিন্তু আইনি জটিলতায় সেগুলিতে কোনও কাজ করতে পারেনি বোর্ড। রাজ্য সরকার শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ১৭৬ টাকা করেছে। কিন্তু কিছু বাগান সেই হারে মজুরি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ।

চা বাগান তৃণমূল মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি মোহন শর্মা বলেন, ‘‘চা চাষের পরামর্শ দানের কয়েকটি কর্মশালা ছাড়া বন্ধ বা ধুঁকতে থাকা বাগান শ্রমিকদের জন্য এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপই করেনি কেন্দ্র। টি বোর্ড নিউ জলপাইগুড়ির টি পার্কে তৈরি চায়ের গুণগতমান পরীক্ষার জন্য একটি কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাব তৈরি করলেও পরিকল্পনার অভাবে সেটিও বন্ধের মুখে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘চা বাগানে সরাসরি কেন্দ্র কাজ করতে পারে না। রাজ্য সরকার এখন পর্যন্ত চা বাগান শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করতে পারেনি।’’

এই তরজার মধ্যেই আজ, শুক্রবার ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি কেন্দ্রের অন্তর্বর্তী বাজেটে চা নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করা হয়নি। চা শ্রমিকদের উন্নয়নে শুক্রবার নতুন কিছু বলবেন কি মোদী? শ্রমিকেরা এখন সে দিকেই তাকিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন