রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাসের অপেক্ষা

রায়গঞ্জের তুলসিপাড়া এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর চাকি পেশায় আঁকার শিক্ষক। উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির বিহিনগর ও ইটাহারের দুর্গাপুর এলাকার দুটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের আঁকা শেখান তিনি। এ জন্য সপ্তাহে চার দিন তাঁকে রায়গঞ্জ থেকে যাত্রীবাহী বাস বা গাড়িতে চেপে ওই স্কুল দুটিতে পৌঁছতে হয়।

Advertisement

গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০২:৩৯
Share:

রাস্তার ধারে এ ভাবেই অপেক্ষা করতে হয় বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।

রায়গঞ্জের তুলসিপাড়া এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর চাকি পেশায় আঁকার শিক্ষক। উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির বিহিনগর ও ইটাহারের দুর্গাপুর এলাকার দুটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের আঁকা শেখান তিনি। এ জন্য সপ্তাহে চার দিন তাঁকে রায়গঞ্জ থেকে যাত্রীবাহী বাস বা গাড়িতে চেপে ওই স্কুল দুটিতে পৌঁছতে হয়। দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘শহরের কোথাও যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। গরমে প্রচণ্ড রোদ মাথায় নিয়ে কখনও সুপার মার্কেট আবার কথনও পুর বাসস্ট্যান্ড মোড়ে দীর্ঘক্ষণ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য হই।’’

Advertisement

রায়গঞ্জের কুমারডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা গুলজার হোসেন ডালখোলা এলাকার ভুষামণি-১ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্কুল খোলা থাকলে তাঁকে নিয়মিত রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা যাতায়াত করতে হয়। তিনিও রায়গঞ্জের পুর বাসস্ট্যান্ড মোড় এলাকায় দাঁড়িয়ে ডালখোলাগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করেন। তাঁর মতে, ‘‘শহরে যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকবে না কেন সেটা বুঝি না। রোদ আর বর্ষায় বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে আমার মতো অনেক নিত্যযাত্রীরই ছাতা প্রধান ভরসা। কিন্তু ছাতা মাথায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে করতে গরমকালে যেমন যাত্রীদের ঘেমে নেয়ে যেতে হয়, তেমনি বর্ষাকালে বৃষ্টি ও হাওয়ার দাপটে আমরা ভিজে যাই।’’

দীপঙ্করবাবু বা হোসেন সাহেবই শুধু নন, রায়গঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলির কোথাও কোনও যাত্রী শেড না থাকার ফলে প্রতিদিন সমস্যায় পড়েন কয়েকশো নিত্যযাত্রী। প্রতিদিন গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য শহরের বিভিন্ন বাসস্টপে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে কড়া রোদে রীতিমত নাকাল হতে হয় তাঁদের। নিত্যযাত্রীরা জানান, পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে উত্তর দিনাজপুর জেলা গঠনের পর রায়গঞ্জ শহর জেলা সদরের স্বীকৃতি পেলেও সরকারি উদ্যোগে শহরের কোথাও যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়নি। উল্টে দেড় দশক আগে শহরের রাস্তা চওড়া করার জন্য মোহনবাটী ও শিলিগুড়ি মোড় এলাকার দুটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় ভেঙে দেয় প্রশাসন। তাই বছরভর রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাস বা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করাই একন তাঁদের রোজনামচা।

Advertisement

রায়গঞ্জের কসবা, দেবীনগর কালিবাড়ী, রাসবিহারী মার্কেট, বিদ্রোহী মোড়, পুর বাসস্ট্যান্ড মোড়, মোহনবাটী, সুপার মার্কেট, শিলিগুড়ি মোড়, হাসপাতাল রোড ও জেলখানা মোড় এলাকায় বাসস্টপ রয়েছে। কোনও বাসস্টপেই শেড ও বসার ব্যবস্থা-সহ যাত্রী প্রতীক্ষালয় নেই। নেই শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থাও। তাই প্রচণ্ড গরমে রোদ ও বর্ষাকালে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে যাত্রীদের বাধ্য হয়েই রাস্তার ধারের বিভিন্ন দোকান বা দোকানের বারান্দার শেডের নিচে আশ্রয় নিতে হয়। অনেক যাত্রী ছাতা ব্যবহার করলেও প্রচন্ড গরমে রোদের তাপে ঘেমে যান। একইভাবে বর্ষাকালে ঝোরো হাওয়া ও বৃষ্টির দাপটে তাঁদেরকে কাকভেজা হয়েই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক জানান, রাস্তা চওড়া করার জন্য দেড় দশক আগে প্রশাসন মোহনবাটি ও শিলিগুড়ি মোড় এলাকার দুটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় ভেঙে দেয়। শহরের উন্নয়নের স্বার্থে সেই সময় বাস মালিকরা প্রশাসনের ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, কিন্তু রাস্তা চওড়া হওয়ার কাজ শেষ হওয়ার পর বাস মালিকরা প্রশাসনের কাছে ওই দু’টি বাসস্টপ-সহ শহরের প্রতিটি বাসস্টপে কলকাতার আদলে ছোট ছোট যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করার দাবি জানালেও কোনও লাভ হয়নি।

তিনি বলেন, ‘‘শহরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ীদের একাংশ জবরদখল করে নিয়েছেন। যাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে জবরদখল উচ্ছেদ করে প্রতিটি বাসস্টপে যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করা। না হলে নিত্যযাত্রীদের হয়রানি ও সমস্যা কোনদিনও মিটবে না। জনপ্রতিনিধিদেরও এই কাজে এগিয়ে আসা উচিত। কারণ, কলকাতায় জন প্রতিনিধিরা তাঁদের তহবিলের টাকায় ছোট ছোট যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করে যাত্রীদের সমস্যা দূর করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন