ফাঁকা পড়ে ১৫টি পদ, ধুঁকছে কোরক

যে হোমে থাকার কথা ২১ জন স্থায়ী কর্মীর সেখানে আছেন মাত্র ৬ জন। চুক্তি এবং মজুরি ভিত্তিক কর্মী পদেও ফাঁকা পড়ে রয়েছে ৫ টি। যার ফলে দিনভর আবাসিকদের নজরদারি এবং যত্নের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয় না।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র।

চকোলেট, ফল বিলি করতে হোমে গিয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। ছয় বছরের ছেলেটিকে সংগঠনেরই এক সদস্য প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কিরে স্নান করিসনি? তোর গা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে কেন?’’ উত্তরে ছেলেটি জানিয়েছিল, “আজ কেউ স্নান করিয়ে দেয়নি।” তখনই বছরের নয়ের আরেকটি ছেলে জানিয়েছিল তিন দিন ধরে একই পোশাক পরতে হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কোনওদিন স্নান করানোর কর্মী থাকে না, কখনও জামা-কাপড় ধোওয়ার কর্মী অনুপস্থিত থাকেন। জলপাইগুড়ির কোরক হোমের অবস্থা এমনই।

Advertisement

ঘুমের ঘোরে কোনও আবাসিক পাশ ফিরে শুলে আরেকজনের ঘুম ভেঙে যায়। স্বপ্ন দেখে ঘুমের মধ্যে কেউ হাত পা ছুড়লে পাশে থাকা অন্যজন মেঝেতে গড়িয়ে পড়ে। কারণ এক বিছানায় গাদাগাদি করেই শিশু আবাসিকদের রাখা হয় বলে অভিযোগ।

যে হোমে থাকার কথা ২১ জন স্থায়ী কর্মীর সেখানে আছেন মাত্র ৬ জন। চুক্তি এবং মজুরি ভিত্তিক কর্মী পদেও ফাঁকা পড়ে রয়েছে ৫ টি। যার ফলে দিনভর আবাসিকদের নজরদারি এবং যত্নের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয় না। জলপাইগুড়ি শহরের রেসকোর্স পাড়ার এই হোমটিতে অনাথ, ভবঘুরে শিশু কিশোরদের সঙ্গে আইনি মামলা রয়েছে এমনও আবাসিকরাও থাকে। উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলা জলপাইগুড়ি সহ কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং এবং কালিম্পঙের শিশু কিশোরদেরও এই সরকারি হোমে পাঠানো হয়। কোরক হোমে আবাসিকের সংখ্যা বাড়লেও পরিকাঠামো বাড়েনি। ফলে শিশুদের এক বিছানায় গাদাগাদি করে শুতে হয় বলে অভিযোগ। সরকারি ভাবে কোরক হোমে ১০০ জনের পরিকাঠামো রয়েছে, কিন্তু আবাসিক রয়েছে দেড়শো জন। কর্মী সংখ্যার অবস্থা আরও করুণ বলে প্রশাসনেরই দাবি। ৫০ জন আবাসিক থাকলে দেখভালের যতজন কর্মী থাকার কথা সরকারি ভাবে কোরক হোমে এখনও ততগুলো পদই রয়েছে।

Advertisement

জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) মলয় হালদার বলেন, “আবাসিকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। আমরা কিছু কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই সেই পদগুলো পূরণ হবে।”

কোরক হোমের স্মারক পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্তকে রাজ্য সরকার মডেল ঘোষণা করে রাজ্যের সব হোমকে পত্রিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। যে হোমকে মডেল করা হয়েছে তার অন্দরেই দেখভাল নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। হোমের কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে সর্বক্ষণ একজন কর্মীর অসুস্থের সঙ্গে থাকার কথা। সম্প্রতি হোমের এক আবাসিক পেটে ব্যাথায় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। রাতে বমি করে পোশাক ভিজিয়ে দেয়। হোম থেকে সেই পোশাক বদলে আনার জন্যও কোনও কর্মী পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন