শিলিগুড়ি পুরসভায় সাংবাদিক বৈঠকে অশোক ভট্টাচার্য। — নিজস্ব চিত্র।
মেয়র অভিযোগ তোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারি নথিতে পুরসভার ‘হাতছাড়া’ হওয়া জমি ফেরাতে উদ্যোগী হল ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর।
শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, পুরসভার কেনা কয়েক একর জমির খতিয়ান সম্প্রতি অন্য এক ব্যক্তির নামে তৈরি হয়েছে। সরকারি রেকর্ডের প্রতিলিপিও জোগাড় করে পুর কর্তৃপক্ষ। আইনি পথে যাওয়ার হুমকিও দেন মেয়র। অভিযোগ শুনে চাঞ্চল্য ছড়ায় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে। এ দিন বিকেলে অবশ্য ভূমি দফতর থেকে জানানো হয়, অধিগ্রহণের পরে কোনও জমির নাম জারি করা না হলে, রেকর্ড তৈরি করার সময়ে ‘ভুল’ হতেই পারে। শিলিগুড়ি পুরসভাকে সেই জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে দফতরের আধিকারিকরা দাবি করেছেন।
সম্প্রতি নিজেদের হাতে থাকা দু’টি জমির খতিয়ানের রেকর্ড দেখে চমকে ওঠেন পুরকর্তারা। শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জল সরবারহের প্রকল্প রয়েছে শহর লাগোয়া ফুলবাড়ি এলাকায়। ১৯৯৪ সালে পুর কর্তৃপক্ষ ওই জমিটি কিনেছিল। পুর আধিকারিকদের দাবি, সম্প্রতি তাঁদের কাছে তথ্য আসে ৮৭ একরের মধ্যে বেশ কিছু পরিমাণ জমির রেকর্ড অন্য এক ব্যক্তির নামে তৈরি হয়েছে। ফুলবাড়ি এলাকা জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের অর্ন্তগত। রাজগঞ্জের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের রেকর্ডে প্রায় ১৬ একর জমির মালিক হিসেবে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। ভক্তিনগরের পুরসভার হাতে থাকা দেড় একর জমির একাংশও সরকারি রেকর্ডে তাদের হাতছাড়া হয়েছে বলে অশোকবাবু অভিযোগ করেন। এ দিন দুপুরে অশোকবাবু সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেন, ‘‘জমি মাফিয়া জমি দালাল এমন অনেক কথা শোনা যায়, তাই বলে সরকারি জমি দখল হয়ে যাবে এটা ভাবা যায় না। আমরা সরকারি রেকর্ড জোগাড় করেছি। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না হলে আইনি পথে মোকাবিলা করব।’’
ভূমি দফতরের রিপোর্টে মালিক হিসেবে অন্য ব্যক্তিকে উল্লেখ করা হলেও, বির্তকিত দু’টি জমিই অবশ্য পুরসভার দখলেই রয়েছে। তবে এ দিন মেয়রের অভিযোগের পরেই জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘রেকর্ড খতিয়ে দেখে কী হয়েছে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেয়েই পদক্ষেপ হবে।’’
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পৌঁছে যায় জেলা প্রশাসনে। ভূমি দফতর থেকে মেয়র অশোকবাবুর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। ভূমি দফতরের তরফে দাবি করা হয়, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পুরসভা জমি কিনলেও নামজারি করা অর্থাৎ নিজেদের নামে জমির রেকর্ড করার আবেদন করেনি। সে কারণে নতুন ভাবে রেকর্ড তৈরির সময়ে পুরনো মালিকের নামেই খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, জমি অধিগ্রহণ এবং বিক্রি হলে তার রেকর্ড ভূমি দফতরের কাছে থাকে। তারপরেও কেন এমন হল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজগঞ্জ ব্লকের ভূমি আধিকারিক বিপ্লব সরকার বলেন, ‘‘এটি ভুল ছাড়া কিছু নয়। পুর কর্তৃপক্ষ আগে জমিটি নিজেদের নামে করিয়ে নিলে সমস্যা হত না। তবে পুরসভার আবেদন পেলেই দ্রুত জমিটি তাঁদের নামে করিয়ে দেওয়া হবে।’’
পুরসভার দাবি, ইচ্ছেকৃত ভাবে ভুল হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হোক। মেয়র অশোকবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভূমি আধিকারিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁরা সব কাগজ শুধরে দেবেন বলে দাবি করেছেন। তবে এ ধরণের ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’