বনবস্তিতে রাতভর দাপাল দুই চিতাবাঘ

দিন তিনেক আগের ঘটনা। ঘাস-পাতা খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিনের মত বাড়ির পাশের মাঠে দড়ি দিয়ে ছাগল বেঁধে রেখেছিলেন খর্গ বাহাদুর প্রধান। বিকেল বেলা হঠাৎ হানা দিয়ে সেই ছাগল নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যায় একটি চিতাবাঘ।

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:০৭
Share:

দিন তিনেক আগের ঘটনা। ঘাস-পাতা খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিনের মত বাড়ির পাশের মাঠে দড়ি দিয়ে ছাগল বেঁধে রেখেছিলেন খর্গ বাহাদুর প্রধান। বিকেল বেলা হঠাৎ হানা দিয়ে সেই ছাগল নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যায় একটি চিতাবাঘ। মাস দু’য়েক আগে সরণ রাইয়ের গোয়াল ঘরে একই ভাবে হানা দিয়ে নিয়ে যায় একটি বাছুর। প্রদীপ সুব্বার খোঁয়ার থেকে শুয়োরও নিয়ে গিয়েছে চিতাবাঘ। খর্গ বাহাদুর ও প্রদীপের বাড়ি পুনডিং বনবস্তিতে। সরণ খাইরনি বনবস্তিতে থাকেন। চিতার হানায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছে মহানন্দা অভয়ারণ্য ঘেরা ওই দুই বনবস্তির বাসিন্দারা। শিলিগুড়ি-দার্জিলিংগামী ৫৫ নং জাতীয় সড়কের পাশে থাকা সুকনা এলাকা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভেতরে পাশাপাশি অবস্থিত ওই দুই বনবস্তি। বনবস্তিদুটির তিনদিকে জঙ্গল আর এক দিকে গুলমা চা বাগান। জঙ্গল আর চা বাগানের মাঝখানে থাকা কাটা পাথরের রাস্তা পার করেই ঢুকতে হয় বস্তিতে। বন দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন তিন কিলোমিটারের ওই ভাঙাচোরা রাস্তায় রয়েছে হাতি যাতায়াতের তিনটি করিডর। ফলে চলাচল করাও অত্যন্ত বিপদজনক।
বস্তির বাসিন্দারা জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার রাতভর দুই বনবস্তিতে দাপিয়ে বেরিয়েছে একজোড়া চিতাবাঘ। পরে বন দফতরের কুইক রেসপন্স টিম এসে দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় দুই চিতাকে জঙ্গলে ঢুকিয়ে দেয় বলেই জানিয়েছেন বস্তিবাসিরা। খায়রনির বাসিন্দা দীপেশ থাপা বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ির উঠোনে চলে এসেছিল একটি চিতাবাঘ। ভয়ে আমরা ঘরে ঢুকে গিয়েছিলাম। পটকা ফাটালেও চিতা রাগে গজরাতে থাকে।’’ বাসিন্দারা জানিয়েছেন শেষ ছয় মাস থেকে চিতার অত্যাচার অনেকটাই বেড়েছে। খায়রনির আর এক বাসিন্দা তনত ছেত্রী বলেন, ‘‘তিন দিন আগে সন্ধ্যাবেলা আমার বাড়ির উঠোন থেকে ছাগল নিয়ে চলে গিয়েছে চিতা। এখন আতঙ্কে আছি।’’ দুই বস্তির মাঝখানে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে অনেকেই জঙ্গল ঘেঁষা রাস্তা পার হয়ে সুকনাতে হাইস্কুলে পড়তে যায়। পুনডিংয়ের বাসিন্দা উমেশ থাপা বলেন, ‘‘দিনের বেলাতেও চিতাবাঘ বের হতে শুরু করায় চিন্তা বেড়েছে। যে রাস্তা দিয়ে আমরা যাতায়াত করি সেখানে কোনও গাড়ি চলে না। সাইকেলে বা হাঁটা পথেই আমাদের সুকনা গিয়ে গাড়ি ধরতে হয়। হাতির অত্যাচার তো আছেই এ বার চিতাবাঘের ভয়ে রাতের ঘুম ছুটেছে।’’
জিটিএ সূত্রে জানা গিয়েছে দুই বনবস্তিতে প্রায় ৪০ টি পরিবার বসবাস করে। অনেকেই গরু, শুয়োর ও ছাগল চাষ করেন। বন দফতরের পুনডিংয়ের বিট অফিসার দীপেন সুব্বা বলেন, ‘‘এলাকায় প্রচুর চিতাবাঘ আছে। আমরা নজরদারি চালাচ্ছি। চিতাবাঘ দেখলেই জঙ্গলে ঢুকিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের কুইক রেসপন্স টিমও কাজ করছে।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া। সংস্থার গবেষক সুরজ কুমার দাস বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন