রাতের শহরে হঠাৎ চিতাবাঘ

তুমি যে এ ছাদে কে তা জানত!

বনকর্মীরা ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে জাল পেতে চিতাবাঘটিকে ধরার জন্য চেষ্টা করেন। ডিএফও উমারাণী বলেন, ‘‘চিতাবাঘটিকে ধরে জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ০৩:৪৫
Share:

আগমন: শিলিগুড়ির সেবক রোডের উপরে আড়াই মাইল এলাকায় একটি গুদামের ছাদে হঠাৎ দেখা মিলল এই চিতাবাঘের। রাত তখন দশটা।

শহরের ব্যস্ত শপিং মলের ঠিক উল্টো দিকে আচমকা দেখা গেল, হেলেদুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি চিতাবাঘ! বুধবার তখন রাত পৌনে ১০টা।

Advertisement

মুহূর্তে হইচই শুরু হয়ে গেল শিলিগুড়ির সেবক রোডের আড়াই মাইলের কাছে সেই শপিং মলে। সেখানে একটি মার্বেলের দোকান ও পাশেই একটি গুদাম রয়েছে। তারই ছাদে চিতাবাঘটিকে প্রথম দেখতে পান এক চৌকিদার। দেখেই তিনি চেঁচামেচি শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। খবর যায় বন দফতর ও পুলিশের কাছে। অদূরের ভক্তিনগর থানার আইসি অনুপম মজুমদার বাহিনী নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে কৌতূহলী জনতাকে সরিয়ে দেন। বন দফতরের অফিসার-কর্মীরা পৌঁছে হ্যান্ড মাইকে সতর্ক করেন। ইতিমধ্যে প্রশাসনের তরফে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বনকর্মীরা ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে জাল পেতে চিতাবাঘটিকে ধরার জন্য চেষ্টা করেন। ডিএফও উমারাণী বলেন, ‘‘চিতাবাঘটিকে ধরে জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।’’

ঘটনাস্থলের কাছেই বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের শালুগাড়া বনাঞ্চল। অদূরে চা বাগানও রয়েছে। ফলে, সেখানে চিতাবাঘের ঘোরাফেরা রয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে চিতাবাঘ সটান এসে জনবহুল বাণিজ্যিক এলাকায় ঢুকে পড়বে, উঠে যাবে দোকানের ছাদে— এমনটা আজ পর্যন্ত কেউ ভাবতে পারেননি। বছর দুয়েক আগে এক বার এই সেবক রোডে হাতি ঢুকে পড়ে। তাই নিয়ে দিনভর হুলুস্থুল চলেছিল শহরে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এলাকার মার্বেল ব্যবসায়ী বাবলু অগ্রবাল বলেন, ‘‘এ বার চিতাবাঘ ঢুকে পড়ল! এখন তো রাতে চৌকিদারও ঘোরাফেরা করতে ভয় পাবে!’’

Advertisement

শিলিগুড়ি শহরে চিতাবাঘ ঢুকে পড়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। সাত বছর আগে ভক্তিনগর থানা এলাকায় একটি চিতাবাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। সেটিকে ধরতে গিয়ে একাধিক বনকর্মী জখম হন। এর পরে শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ায় একটি বাড়িতে ঘরের মধ্যে চিতাবাঘ ঢুকে পড়েছিল। সেটিকে গুলি করে ঘুম পাড়িয়ে খাঁচাবন্দি করা হয়।

কিন্তু শহরে বারবার বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়ার কারণ কী? বনকর্মীদের একাংশ মনে করছেন, অনেক সময়ে কুকুর তাড়া করতে গিয়ে চিতাবাঘ শহরের কাছে চলে আসে। তার পর অন্ধকারে কিছুটা দিশা হারিয়ে সেটি শহরে ঢুকে পড়তে পারে। এ বারেও হয়তো তাই হয়েছে। আবার পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, যে ভাবে

জঙ্গল ছোট হয়ে বসত বাড়ছে, তাতে বন্যপ্রাণীদের থাকার জায়গা ছোট হয়ে আসছে। কমছে খাবারও। ফলে তাদের শহরের দিকে চলে আসাটা অস্বাভাবিক নয়।

তাঁদের আরও যুক্তি, অনেক সময়ে চোরাশিকারিদের তাড়া খেয়েও লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে চিতাবাঘ। এ ক্ষেত্রে বনকর্মীরাও সেই ভয় পাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন