উত্তরের চিঠি

অরণ্যের প্রতি উদাসীনতা অব্যাহত

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০২:০০
Share:

অরণ্যের প্রতি উদাসীনতা অব্যাহত

Advertisement

‘গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও’ ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ এই স্লোগানগুলি অরণ্য সপ্তাহের সময় শোনা যায়। অরণ্য সপ্তাহ ছাড়া এই স্লোগানটি মুখরিত হয়ে ওঠে। অবশ্যই স্লোগানগুলি তাৎপর্য রয়েছে অনেক। কারণ অরণ্যের প্রতি মানুষের উদাসীনতা বিগত পঞ্চাশ ধরে লক্ষ করে আসছি। এখন তা চরম সীমায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশটা মরুভূমি হতে আর দেরি নেই।

জলবায়ুর বৈচিত্র্যে বিভিন্ন স্থানের গাছ বিভিন্ন প্রজাতির হয়। যে স্থানে যে জলবায়ু সেই জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে গাছগাছালি নিজের মতো করে বেড়ে ওঠে। যেমন আমাদের উত্তরবঙ্গের কথাই বলি—এখানকার বনভূমিতে শাল, সেগুন, শিশু, চাপ, গামারি, লসুনি চিকরাশি, শিরিষ, জারুল, শিমূল ইত্যাদি দেখা যায়। আর বস্তি এলাকায় দেখা যায় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা কৃষ্ণচূঁড়া বট ইত্যাদি। উত্তরবঙ্গের জলবায়ুতে এরা স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে ওঠে। এই অঞ্চলের যত সব গাছের কথা উল্লেখ করলাম এ সবই অধিক ডালপালা ও ঘন পাতা যুক্ত। এ রকম গাছপালাই পাখিদের অবাধ পাখিদের এবং এখানেই বাসা তৈরি করতে বেশি পছন্দ করে।

Advertisement

যেমন একটি বট গাছের কথাই ধরা যাক—শত শত চেনা-অচেনা বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আনাগোনা এই সমস্ত গাছ। বটের পাঁকা ফল খাচ্ছে বিশ্রাম নিচ্ছে, কত স্বাচ্ছন্দ্যে তারা থাকছে। শুধু পাখিই নয়, অধিক পাতা যুক্ত গাছে মৌমাছির চাক ইত্যাদির অবাধ বিচরণ। বিভিন্ন প্রজাতির পরজীবী (প্যারামাইটিক) উদ্ভিদ ও এই সমস্ত গাছে জন্মায়। বিভিন্ন পরজীবী উদ্ভিদগুলি আবার ভেষজ গুণে ভরা। তা হলে দেখুন স্থানীয় গাছগাছালির কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পরিপূর্ণ এক জৌব বৈচিত্রের ভাণ্ডার।

বহুজাতিক সংস্থার এজেন্টে মাঝে মাঝে প্রত্যন্ত গ্রামে ঢুকে বিদেশি গাছের চারা রোপণের পরামর্শ দেন। সঙ্গে ওই সব গাছের ক্যাটালগ দেখিয়ে প্রতারিত করেন। এ রকম এক এজেন্টের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি কাঁঠাল দেখিয়ে মায়ানমারের (বার্মা) হাইব্রিড সেগুনের চারা রোপণের কথা বলেছিলেন।

ক্যাটালগ লক্ষ করলাম সে দেশের হাইব্রিড সেগুনগুলি ডালপালা ও পাতা অনেক কম। তিনি বললেন ডালপালাও পাতা কম হলেও কাঠ দেয় অনেক। তবে প্রশ্ন হচ্ছে হাইব্রিড গাছগুলি এ রকম বৈশিষ্ট হওয়ার কারণে স্থানীয় গাছগুলির তুলনায় ওই সব গাছ অক্সিজেনে ছড়ায় কম এবং কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে কম। প্রত্যেকেই যদি বিদেশি গাছের প্রতি মোহ হয়ে পড়ি তা হলে কিন্তু জৈব্য বৈচিত্র্য ও পরিবেশের উপর ব্যাপক কু-প্রভাব পড়ে।

শুধু বিদেশি গাছই নয় কৃষিক্ষেত্রের কথা একবার ভাবুন তো। বহুজাতিক সংস্থার রাসায়নিক সারের দাপটে কৃষিক্ষেত্রে আজ ঝলসে গিয়েছে। দেরিতে হলেও এখানে সবাই বুঝতে পেরেছি রাসায়নিক সারের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। এখন পত্রপত্রিকায় বেরিয়েও টেলিভিশনে জৈব সারের উপকারিতা এবং কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের প্রচার হচ্ছে। বহুজাতিক সংস্থার অবাধ বাণিজ্যের ফলে তাদের তৈরি ঘান, গম শাক, সবজি এ দেশে ছেয়ে গিয়েছে। তা সবই শংকর প্রজাতির। দেশীয় ধান, গম শাকসবজি এখন বিলুপ্তির পথেই এগোচ্ছে।

সুতরাং জৈব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার্থে স্থানীয় গাছগুলি বনে এবং গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে রোপণ করা প্রয়োজন।

অশোক সূত্রধর। ফালাকাটা।

নিয়মকে কলা দেখিয়ে চলছে প্রাণী কনাবেচা

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী যে কোনও বন্য প্রাণী বা পাখি বেচা কেনা কঠোর শাস্তিমূলক অপরাধ। অথচ ওই আইনকে কার্যত কলা দেখিয়ে এক শ্রেণীর লোক তরাই-ডুয়ার্সের নানা বন জঙ্গল থেকে দেদার পাখি ধরে পাচার করে দিচ্ছে ভিন রাজ্যে। ফি বছর ফাল্গুন চৈত্র মাস পড়লেই পাখিরা উঁচু উঁচু গাছের ডালে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। আর তখন থেকেই পাখি পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়ে যায়। চোরা শিকারিরা গাছে উঠে নানা ফন্দি এঁটে প্রকৃতির কোল শূন্য করে শাবকগুলি ধরে এনে পাচার করে দেয় নানা জায়গায়। সবুজ বনানী ছে়ড়ে প্রাণীগুলিকে আজীবন পচে মরতে হয় লোহার খাঁচায়।

বেশ কয়েক বছর ধরেই ডুয়ার্সের নানা জায়গায় রমরমিয়ে চলছে অবৈধ পাখি পাচার। এহেন অবৈধ পাখি পাচার বন্ধে বন বিভাগের কড়া নজরদারির বিশেষ প্রয়োজন। অথচ নজরদারির অভাবেই চলছে এ ধরনের বেআইনি পাখি ব্যবসা। বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করা আইনের কঠোরতা ও আইনের প্রয়োগ বাড়ানো বিশেষ জরুরি। তা ছাড়া পাখিদের প্রজননের ওই সময়টাতে পাখি পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট বনদফতর থেকে বিশেষ কিছু প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নেওয়াও প্রয়োজন।

ভীমনারায়ণ মিত্র। রায়গঞ্জ। উত্তর দিনাজপুর

হাসপাতালে কর্মসংস্কৃতির অভাব চোখে পড়ে

রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যাবার ট্রলির ওপর খোলা অবস্থায় রোগীদের খাবার সহ থালা এবং সেই ট্রলি থেকে মাছের টুকরো বেড়াল নিয়ে যাবার খবর পড়লাম (আঃ বাঃ পঃ ১৭,৫,১৫)। যা আবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরের চোখের সামনে ঘটেছে। রোগীদের খাবারের থালা ঢাকা অবস্থায় নির্দিষ্ট ট্রলিতে চাপিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে যাবার কথা। পরিকাঠামোর অভাব নাকি কর্মসংস্কৃতির অভাবে হয়তো এর জন্য হাসপাতালের সুপার বা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জবাবদিহি করতে হতে পারে। বা অন্য কোনও শাস্তিও তাঁদের কপালে জুটতে পারে? তাদের যাবতীয় প্রশাসনিক ও পরিকাঠামো বজায় রাখার মত কাজ সামলে কী এই সব ছোটখাটো বিষয় দেখা সম্ভব? নিজ নিজ দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মীরা নিজ নিজ কাজের প্রতি সদিচ্ছা যথেষ্ট দায়িত্বশীল হলে সঙ্গে প্রয়োজনে বাস্তববুদ্ধি প্রয়োগ করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না।

মৃদুল কুমার ঘোষ। মালদা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন