সংশোধনাগারে মদ, স্বীকার সুপারেরই

জেল সুপারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে খাবার বয়কট করল কোচবিহার জেলা সংশোধনাগারের বন্দিরা। কিন্তু সেই প্রসঙ্গেই সুপার স্বীকার করে নেন, এই সংশোধনাগারে গাঁজা, মদ ঢুকছে। তাঁর বক্তব্য, তিনি তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়াতেই বন্দিরা তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৬
Share:

জেল সুপারের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে খাবার বয়কট করল কোচবিহার জেলা সংশোধনাগারের বন্দিরা। কিন্তু সেই প্রসঙ্গেই সুপার স্বীকার করে নেন, এই সংশোধনাগারে গাঁজা, মদ ঢুকছে। তাঁর বক্তব্য, তিনি তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়াতেই বন্দিরা তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

Advertisement

শনিবার রাতে বন্দিদের কেউই খাবার খাননি। রবিবারও তা নিয়ে চলছিল টানাপড়েন। পরে কোচবিহার সংশোধনাগার পরিদর্শক কমিটির সদস্য খোকন মিয়াঁ সেখানে যান। বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কেউই অবশ্য খারাপ ব্যবহারের কথা স্বীকার করতে চাননি। জেল সুপার রাজীব রঞ্জন ওই অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করছি। নানা অনিয়ম চলছিল জেলে। বিস্কুটের আড়ালে টাকা, গাঁজা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। মদ ঢুকছিল। কিছু বন্দি জোর করে চাঁদা তুলছিল। তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাতেই মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে।” তিনি এই ব্যাপারে একটি রিপোর্ট তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছেন। খোকনবাবু সুপারকে রাজধর্ম পালনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “কিছু অভিযোগ উঠেছে। ভুল বোঝাবুঝি থেকে এমনটা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি মিটে গিয়েছে।” সংশোধনাগার সূত্রের খবর, এখন ২৬৪ জন বন্দি সেখানে বন্দি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন মহিলা ও শিশু রয়েছেন। বন্দিদের আত্মীয়দের কয়েক জন অভিযোগ করেছেন, কয়েকদিন ধরেই নিম্ন মানের খাবার দেওয়া হচ্ছিল। তা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল কয়েক জন। আবার কয়েক জন অসুস্থতা বোধ করে চিকিৎসকের কাছে যেতে চায়। সে ব্যাপারে নজর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। দু’টি ব্যাপারেই কিছু বন্দি সরব হওয়ায় তাঁদের মারধর করা হয়েছে।

জেল সুপার অবশ্য এমন অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেন, এই সংশোধনারে বেআইনি কাজের রমরমা ছিল। গত ১৩ মে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে ধীরে ধীরে তার কাছে পুরো বিষয় স্পষ্ট হতে থাকে। তা নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। পাঁচ জন বন্দিকে জেলে চাঁদা তোলার অভিযোগে জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘একজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামি জেলে বসে যা খুশি করছিল। নতুন বন্দিদের পরিবারে কাছ থেকে টাকা তুলছিল। গাঁজার কারবার ফেঁদে বসেছিল।’’

Advertisement

সুপার জানিয়েছেন, হোগলা সাবানের মধ্যে গাঁজা ভরে তা ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। বিস্কুটের প্যাকেটের ভিতরে টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে তা ভিতরে পাঠানো হত। তিনি এসব হাতেনাতে ধরেছেন। শুধু তাই নয়, গত স্বাধীনতা দিবসে জেলের ভিতরে পরিষ্কার করাতে গিয়ে মদের বোতল উদ্ধার হয়। এই সবের পিছনে একটি চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জলপাইগুড়ি জেলে পাঠানো ওই বন্দির কাছ থেকে তিনি এক হাজার টাকা এবং বেশ কিছু গাঁজা উদ্ধার করেন। শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোনেও বন্দিদের সঙ্গে বাইরে যোগাযোগ রয়েছে। সব কিছু নিয়ে কড়াকড়ি করায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে জেল সুপার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জলপাইগুড়িতে আমি পোস্টিং ছিলাম। সেই সময় এখান থেকে যাওয়া কিছু বন্দি আমাকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছিল। তাঁদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হয়। এখন সব বন্ধ করে দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন