টহল: পণ্ডিতপোতার রাস্তায় নজরদারি। নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন ধরেই পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় বোমাবাজির ঘটনায় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ইসলামপুরে। আগের দিন পণ্ডিতপোতা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বোমার আঘাতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার পাশের গ্রাম পণ্ডিতপোতা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি ঘটে। পিস্তল, বোমা উদ্ধার হয়।
এ দিন থমথমে ছিল গোটা পন্ডিতপোতা ১ এলাকা। দোকানপাট বন্ধ ছিল। কার্যত বন্ধের রূপ নেয় টালিগর বাজার। পুলিশ পিকেটও রয়েছে। এ দিন দুপুরে নিহত লাল মহম্মদের (৫০) দেহ পৌঁছয় গ্রামে। বিকেল চারটা নাগাদ শেষকৃত্য করা হয়। শনিবার পণ্ডিতপোতা ১ গ্রামপঞ্চায়েতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সঘর্ষে গুলি চলে, বোমাবাজি হয়। বোমের আঘাতে মৃত্য হয় লাল মহম্মদের। আহত হন দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন। ১১ আসনের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দখলে ছিল ছয়টি। পাচটিতে জেতে নির্দল। পরে নির্দল সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেন। প্রধানপদ নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ শুরু হয়।
কিছু দিন আগেই ইসলামপুর শহরের উপকন্ঠে ধনতলা বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করলেও ওই ঘটনায় মূল দুষ্কৃতীরা অধরাই রয়েছে। সামনে পুজো। তার আগে এলাকার এই পরিস্থিতি উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী থেকে এলাকার বাসিন্দারা সকলেই। পুলিশের সামনেই গোলমাল, বোমাবাজি ঘটলেও তারা আটকাতে পারছে না কেন সেই প্রশ্ন তুলে পুলিশ-প্রশাসনের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এলাকায় যথেচ্ছ আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা মজুত থাকলেও আগাম ব্যবস্থা নিয়ে সেগুলি কেন উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, ‘‘পুলিশ সক্রিয় হয়েছে। শনিবার এবং রবিবার গোলমালের ঘটনায় জড়িত বেশ কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে।’’
ইসলামপুরের মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মুখোপাত্র দামোদর অগ্রবাল বলেন, ‘‘এলাকার প্রশাসন বলে কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা সত্যিই আতঙ্কিত। এর পর মানুষ প্রতিবাদী হয়েই রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।’’
গন্ডগোলের মধ্যে পড়ে দিশেহারা সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকেই। ইসলামপুরের গরহনডাঙা এলাকার এক জুনিয়র হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক মিথিলেশ রজকের কথায়, ‘‘সকালের স্কুল হয় আমাদের। স্কুল ছুটির পর যখন বাড়ির যাচ্ছিলাম, রাস্তায় বোমের আওয়াজ পাই। বুঝলাম রাস্তায় আটকে পড়েছি। কোনও রকমে সাইকেল ঘুরিয়ে গ্রামের পথে বাড়ি ফিরেছি।’’ ওই গ্রামগুলিতে বাড়ি থেকে বার হতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই শাসকদল এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইসলামপুরের নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক হিমাংশু সরকার বলেন, ‘‘ইসলামপুরবাসী শান্তি প্রিয়। এলাকা এ ধরনের গন্ডগোল বন্ধ হোক আমরা চাই।’’ ইসলামপুরের বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জগদ্ধাত্রী সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘ ২৯ বছর ইসলামপুরে রয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতি আগে দেখেননি। ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবালের বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে।’’