প্রতীকী ছবি।
তিস্তাবাজারের সেতু থেকে একটু আগে বার হয়ে গিয়েছে বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তার মিছিল। গাড়িতে গাড়িতে তখন ছয়লাপ সেতুর দু’পাশ। স্লোগান উঠেছে, ‘‘ভারতমাতা কি জয়!’’ তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আর ভিড়ের লেশমাত্র নেই। এমনকি নেই বিজেপি, মোর্চা বা জিএনএলএফের কোনও পতাকা-ফেস্টুনও।
কিন্তু রয়ে গিয়েছে রেশ। মণিহারি দোকান চালান দীনেশ প্রধান। তাঁর মুখ তখনও উজ্জ্বল। বলছিলেন, ‘‘এ বারে বিজেপিই, মিলিয়ে নেবেন।’’
তিস্তাবাজার থেকে ১৪ কিলোমিটার কালিম্পং। প্রার্থী হওয়ার পরে প্রথম বার এই শৈলশহরে আসছেন বিস্তা। পথের কোথাও তাঁকে স্বাগত জানানো ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টার, নিদেন পক্ষে কোনও দলীয় পতাকা অবধি নেই। শহরেও না। এখানে ভোট ১৮ এপ্রিল। হাতে আর মোটে আড়াই সপ্তাহ। তা হলে প্রচার নেই কেন?
বিজেপির এক কার্যকর্তা বললেন, ‘‘এখনও পোস্টার সব তৈরি হয়ে আসেনি। ক’দিন সবুর করুন।’’ পাহাড়ের একাংশের কথায়, বিমল গুরুং বেশি জাঁকজমকের প্রচারে না করেছেন। সত্যি-মিথ্যে বলা কঠিন। কারণ, এখন বিমলের সব বার্তাই আসছে অন্তরাল থেকে। যেমন এসেছে বৃহস্পতিবার। অডিয়ো বার্তায় বিমল পাহাড়ের সকলকে এক হতে বলেছেন বিনয় তামাং, অনীত থাপা আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এরও সত্যাসত্য যাচাই করা কঠিন।
গত মে মাসে এই রাস্তা দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন কালিম্পংয়ে প্রথম প্রশাসনিক বৈঠক করতে। দুর্যোগ মাথায় নিয়ে সে দিন হাজির ছিলেন কয়েকশো মানুষ। এই তিস্তা সেতুতেই। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যে সব কাজের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার বেশ কিছু এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তা হলে কি সেই কাজকেই কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছেন বিমলরা? পুলিশ-প্রশাসনের হুমকি আসতে পারে, মোর্চার তরফ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া এই আশঙ্কা কি তবে সেই ভয়কে ঢাকতেই?
জবাব মিলবে না। কারণ বিমল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিস্তা কিন্তু কালিম্পংয়ের অলিগলিতে ঘুরে প্রচার চালিয়ে গেলেন এ দিন। সঙ্গে বিজেপি এবং মোর্চার লোকজন। ধাপে ধাপে সিঁড়ি ভেঙে উঠলেন পার্টি অফিসে। সেখানেও ধ্বনি উঠল, ‘‘ভারতমাতা কি জয়!’’ তার পর প্রচারের প্রথম পর্ব সেরে চলে গেলেন নিজের আস্তানায়। তার আগে মাড়োয়ারি ভবনে বৈঠকও করলেন কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। কিন্তু বার হয়ে যাওয়ার সময়েও সেই একই ছবি। কয়েকটি গাড়িতে কয়েক জন বিজেপি কার্যকর্তা, রমেশ আলে-সহ মোর্চার গুটিকয়েক নেতা-কর্মী। পতাকা গুটিয়ে সকলেই রেখে দিলেন গাড়ির আসনে। তিস্তাবাজারের মতো এখানেও দেখা গেল, বিস্তা চলে যাওয়ার পরে তাঁর প্রচার নিয়ে তাপউত্তাপ নেই বিশেষ। যেমন দিন চলে, তেমনই চলতে লাগল।
নিস্তরঙ্গ পাহাড়ে সব প্রশ্ন লুকিয়ে রেখে সূর্য গেল অস্তাচলে।