ভোটের কেন্দ্রে আলাদা লাইন চান তৃতীয় লিঙ্গ

মুখিয়ে রয়েছেন তার মতো অনেকেই। সব মিলিয়ে জেলার ২১ জন, নথিতে যাঁদের ‘লিঙ্গ’ পরিচিতি ‘অন্য’ বা তৃতীয় লিঙ্গ। ভোট কেন্দ্রে আলাদা ভোটার ‘লাইন’ চালুর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

জীবনে লড়াই কম করতে হয়নি। কিন্তু তার পরেও হাল ছাড়েননি। মনের জোরকে সম্বল করে বরাবর দিন বদলের স্বপ্ন দেখেছেন ওঁরা। সেই স্বপ্ন নিয়েই এ বার লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে চান কোচবিহারের অরিন্দম দাস ওরফে সুমি। ১১ এপ্রিল কোচবিহারের ঘুঘুমারি হাইস্কুলের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে মানসিক ভাবে প্রস্তুত তিনি। মুখিয়ে রয়েছেন তার মতো অনেকেই। সব মিলিয়ে জেলার ২১ জন, নথিতে যাঁদের ‘লিঙ্গ’ পরিচিতি ‘অন্য’ বা তৃতীয় লিঙ্গ। ভোট কেন্দ্রে আলাদা ভোটার ‘লাইন’ চালুর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

সুমির কথায়, “আমাদের কথা কেউ ভাবে না। না শাসক, না বিরোধী।” জানালেন, রাজ্যে একটি তৃতীয় লিঙ্গ উন্নয়ন বোর্ড হয়েছে। কিন্তু সে ভাবে কাজ হয়নি। আমাদের জীবিকা, স্বাস্থ্যের মতো নানা সমস্যা রয়েইছে। সকলের কাছেই আমরা যেন অছ্যুত। তবু দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে ভোট দিতে যাব। তিনি জানান, শীতলখুচি, মাথাভাঙ্গাতেও কয়েকজনের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পিউ দাস, শঙ্কর দাস প্রমুখ। তাঁদের অভিযোগ, গত বিধানসভা নির্বাচনে অনেকেই তৃতীয় লিঙ্গ বা অন্য শ্রেণিভুক্ত হয়েও বুথে বুথে মহিলাদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন।

লড়াইয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে ওঁদের রুখে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ উঠে আসে। গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানলেন সুমিই। বলছিলেন, “আমাদের জন্য ভোটকেন্দ্রে পৃথক লাইনের ব্যবস্থা ছিল না। পুরুষ, মহিলাদের যেমন থাকে আর কি! গতবার বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম।” নিজের দাবির সমর্থনে তাঁর যুক্তি, স্বীকৃতি যখন মিলেছে, তখন ভোটকেন্দ্রে ওই ব্যবস্থাও রাখার কথা ভাবা দরকার। তা ভোটার সংখ্যা যাই থাক না কেন।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তালিকায় শুরুতে ২২ জনের নাম ছিল। একজনের নাম ভুলবশত তৃতীয় লিঙ্গের তালিকাভুক্ত ছিল। সম্প্রতি তালিকা সংশোধন, বিয়োজনের পরে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। গত নির্বাচনের মতো এ বারও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারদের যাতে সমস্যা না হয়, তা দেখা হচ্ছে। ওই ভোটারদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও মাথায় রাখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী সমস্ত রকম পদক্ষেপ করা হবে। জেলা নির্বাচন দফতরের এক আধিকারিক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, “ভোটকেন্দ্রে যাতে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারদের কোনও রকম সমস্যা না হয়, সে সব কিছু গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

‘বঞ্চনা’র আক্ষেপ, অভিযোগ নিয়ে অবশ্য রাজনৈতিক শিবিরের অন্দরে কিছুটা অস্বস্তিও রয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা নেতা, বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ অবশ্য বলেন, “সমাজের সব স্তরের বাসিন্দাদের উন্নয়নেই রাজ্য নানা কাজ করেছে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি দীপক সরকার বলেন, “সকলেই সমাজের অংশ। ওঁদের প্রতিও নজর দেওয়া উচিত।” দিনহাটার বাসিন্দা বিজেপি নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা লিঙ্গভেদে বিশ্বাস করি না। দেশের প্রতিটি নাগরিকের উন্নতির জন্য কেন্দ্র সরকার নানা ভাবে কাজ করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন