প্রিয় চিকিৎসক জয়ন্তের বিরুদ্ধেই লড়াই বিজয়ের

বিজয়বাবু বলেন, ‘‘ভোটে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না।”

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪০
Share:

জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়। —ফাইল চিত্র

এলাকার কেউ চিকিৎসায় সাহায্য চাইলে জলপাইগুড়ির বিদায়ী সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মণ সচরাচর তাঁদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক জয়ন্ত রায়ের কাছেই পাঠাতেন। সেই জয়ন্তবাবুই এ বার জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী বিজয়বাবুর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রতীকে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।

Advertisement

সঙ্ঘ পরিবারের ‘ঘরের লোক’ এবং চিকিৎসক হিসেবে রাজবংশী সমাজে ভাল ভাবমূর্তি থাকা জয়ন্ত বিরোধী ভোটের কিছু অংশ নিজের দিকে টেনে নিতে পারেন এমন আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ।

তবে ভোটের কাঁটাছেড়ায় নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট করতে রাজি নন কেউই। খোদ তৃণমূল প্রার্থী বিজয়বাবুই এ দিন বললেন, “জয়ন্ত যখন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র, তখন থেকে তাঁকে চিনি।’’

Advertisement

বিজয়বাবু বলেন, ‘‘কাউকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠাতে হলে জয়ন্তের কাছে পাঠিয়েছি। দু’একদিনের মধ্যে তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি ঠিকই। তবে ভোটে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না।”

গত পঞ্চায়েত ভোটের শুরুতে রাজ্য জুড়ে মনোনয়ন পেশ নিয়ে সংঘর্ষ, মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় জলপাইগুড়ির বিডিও অফিসে এক সঙ্গে মনোনয়ন জমা দিতে দেখা গিয়েছিল শাসক-বিরোধীদের। সেই সৌজন্য অবশ্য পরের দিকে বজায় না থাকলেও, মোটের ওপর জলপাইগুড়ি জেলায় সব ভোটেই রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় থাকতেই দেখেছেন বাসিন্দারা। বিজেপি প্রার্থীও বললেন, “বিজয়দা-র সঙ্গে বহু দিন চেনাশোনা। ভোট হবে রাজনৈতিক ইস্যুতে। তাতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দূষিত হয় এমন কিছু এখানে হবে না।” প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক জয়ন্তবাবু শুক্রবার জলপাইগুড়ি পৌঁছেছেন।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের দীর্ঘ দিনের কার্যকতা জয়ন্তের সঙ্গে বিজেপির অবশ্য সরাসরি যোগ ছিল না। সম্প্রতি তাঁকে লোকসভার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সঙ্ঘ পরিবার থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

তখন থেকেই বিজেপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেখা যেত তাঁকে। তবে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে যেখানে গতবারের সাংসদকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে, সেখানে রাজনৈতিক কোনও মুখকে প্রার্থী না করা কি ঝুঁকি হয়ে গেল—সে প্রশ্ন দলের কর্মীদের একাংশের মধ্যেই রয়েছে।

বিজেপি নেতৃত্বের যুক্তি, জেলা বা রাজ্যস্তর থেকে কোনও হস্তক্ষেপ করা হয়নি। জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনে ৪৯ শতাংশ ভোটার তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ভুক্ত।

সঙ্ঘের নির্দেশ ছিল স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে এবং রাজবংশী সমাজে জনপ্রিয় এমন কাউকে প্রার্থী করা হবে। সেই জন্যই জয়ন্তবাবুকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে বিজেপির অন্দরের খবর।

শুধু তাই নয়, জয়ন্তবাবুর বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। লাটাগুড়ির বাসিন্দা জয়ন্তের দুই ছেলেমেয়েও ডাক্তারি পড়ছেন। রাজবংশী লোকসংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছেন। সব মিলিয়ে তাই তাঁকেই লোকসভার টিকিট দিয়েছে দল। বিজেপির জেলা সম্পাদক বাপি গোস্বামী বলেন, “চিকিৎসক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে, বহু দুঃস্থদের মেডিক্যাল কলেজে চিকিতসায় সাহায্য করেছেন। তাই জনপ্রিয় চিকিৎসকের হাত ধরেই এ বার জলপাইগুড়ি লোকসভায় পরিবর্তন আসবে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর মন্তব্য, “কেউ দিবাস্বপ্ন দেখতেই পারে। তবে জলপাইগুড়ি আসন আমরা ওয়াকওভার পেয়েছি।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন