পাশাপাশি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী, অভিনেত্রী নুসরত জাহান। মাথাভাঙায়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার ছিল। যে কোনও মুহূর্তে বৃষ্টি নামতে পারে সে আশঙ্কা ছিল নেতাদের। তার মধ্যেই একজন-দু’জন করে লোক জমতে শুরু করে মাঠে। ঘড়ির কাঁটা যখন দেড়টা পেরিয়ে গিয়েছে তখনও মাঠের অর্ধেক ভরে ওঠেনি। এদিকে, দুপুর ২টোর মধ্যেই সভাস্থলে পৌঁছনোর কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জেলা তৃণমূল নেতাদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে অনেকেরই। বার বার উঠে মাঠের চারদিকে তাকিয়ে ব্লক নেতাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছনোর পরে অবশ্য পাল্টে যায় মাঠের চেহারা। মিটিং শেষে হাসি হাসি মুখে তৃণমূলের জেলা নেতারা দাবি করলেন, আগের সমস্ত রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে এ দিনের জনসভা।
বৃহস্পতিবার মাথাভাঙার কলেজ মোড় সংলগ্ন একটি চাষের জমিতে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সড়কের পাশেই ওই জমি। দলীয় সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে প্রায় আট একর অর্থাৎ ২৪ বিঘে জমির উপরে এদিন সভা করে তৃণমূল। সেখানেই মঞ্চ বাঁধা হয়। বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়। তার মধ্যে মহিলাদের বসার জন্যে আলাদা জায়গা করে দেওয়া হয়। কিছু জায়গায় মাথার উপরে পলিথিনও টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সভাস্থলের পাশেই তৈরি করা হয় হেলিপ্যাড। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভাস্থলে পৌঁছনোর কথা ছিল দুপুর ২টোর সময়। সেই হিসেবেই মাঠে কর্মী-জমায়েত বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ শুরু করে তৃণমূল। তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, মাথাভাঙা-১ ও মাথাভাঙা-২ এবং শীতলখুচি তিনটি ব্লক নিয়ে ওই সভা করা হয়। তিনটি ব্লক থেকে গাড়ি, টোটো, ভুটভুটি এবং অনেকে যাত্রীবাহী গাড়িতেও সভাস্থলের দিকে যান।
মুখ্যমন্ত্রী নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাঠে পৌঁছে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূলের বসিরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী নুসরত জাহান। তখন ২টো বাজতে ঠিক দশ মিনিট। দলীয় সূত্রের খবর, মাঠে পৌঁছে প্রথমে জনসমাগম দেখে তিনি তেমন খুশি হননি। সাধারণত মাঠে পৌঁছেই বক্তব্য রাখেন তিনি। তবে মমতা পৌঁছনোর পর নুসরতকে কিছুক্ষণ বক্তব্য রাখার জন্য দেওয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ মঞ্চে বসেই ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষও বক্তব্য রাখেন। অল্প সময়ে গান শোনান ইন্দ্রনীল সেন। আধ ঘণ্টার এই সময়ে ভিড় উপচে পরে মাঠে। পাকা সড়কের ধার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য দিতে ওঠেই সেই ভিড় দেখে খুশি হন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “দেখেছেন আকাশের মুখ কেমন ভার ছিল, সব কেটে গেল। মানুষের সঙ্গে থাকবেন, মানুষকে নিয়ে কাজ করবেন তাহলে কিছু থাকবে না।” সেই সঙ্গে অবশ্য জানিয়ে দেন, ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজেও তিনি সভা করেছেন। কোনওকিছুকেই তিনি ভয় পান না। রবীন্দ্রনাথ বলেন, “কয়েক লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয়েছে।” তেমনটা অনেকে না বললেও মানুষ যে প্রচুর হয়েছিল তা অস্বীকার করেন না কেউই। বিরোধীরা অবশ্য দাবি করেছেন, মমতার সভায় আর আগের মতো ভিড় হয় না।