‘ভালবাসা দিলাম, পেলাম না’ ফেসবুকে সঙ্গীতার লেখা

সেবক রোডের ফ্ল্যাট থেকে নিখোঁজ সঙ্গীতা কুণ্ডুর আরও একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলল।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৫
Share:

সেবক রোডের ফ্ল্যাট থেকে নিখোঁজ সঙ্গীতা কুণ্ডুর আরও একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলল। নতুন প্রোফাইলটিও গত বছরের ১৫ অক্টোবর অবধি সক্রিয় ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, পুরানো দুটি অ্যাকাউন্টের মতোই এখানেও ডিসপ্লে পিকচার বা ডিপি-তে কোনও ছবি নেই। তার বদলে একটি লেখার মাধ্যমে প্রোফাইল পিক্স তৈরি করা রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘ভালবাসা দিলাম শুধু ভালবাসা পেলাম না, দোষটা কী আমার, সেটা জানতে আজও পারলাম না!’’ এর আগে তদন্তে সঙ্গীতার আরও যে দুটি প্রোফাইলের খোঁজ মিলেছিল, সেখানেও একইভাবে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের ছবির বদলে লেখার মাধ্যমে প্রোফাইল ছবি বা ডিপি করা হয়েছে। একটিতে একইভাবে লেখার সঙ্গে চোখের ছবি রয়েছে।

Advertisement

তদন্তে পুলিশ দেখেছে, আগের দুটি প্রোফাইলের মতোই এখানে বন্ধুদের তালিকা অপশন থেকে বন্ধ করা থাকলেও ছবি, লেখা এবং ট্যাগিং থেকে দেখা গিয়েছে, তিনটি অ্যাকাউন্টেই সঙ্গীতার বন্ধুদের অনেকেই আছেন। তাঁরা নানা কমেন্ট, লাইকও করেছেন। এ ছাড়াও তিনটি প্রোফাইলের মধ্যে আরেকটি মিল মিলেছে। প্রতিটিকে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের শুধুমাত্র একটি করে ছবি রয়েছে। নতুন প্রোফাইলের মেলা ছবিটিতে সঙ্গীতাকে কোনও অনুষ্ঠানের বিশেষ সাজপোশাকে সেজে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। মেকআপ, গয়না পরা ছবিটি দেখে সঙ্গীতার বাড়ির লোকজনই তাঁকে ঠিক চেনা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন।

তবে সঙ্গীতা যে সংস্থায় কর্মরত ছিলেন, সেখনাকার কর্মীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, নিয়মিত নাচ, ব্যায়াম এবং পার্লারে শরীর চর্চা করার পর সঙ্গীতার চেহারা আগের থেকে অনেকটাই বদলে গিয়েছি। ২০১৩ সালের তুলনায় অনেকটাই তাঁকে রোগা দেখাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রোফাইলটির ছবি বিভাগে জয়পুরের একটি ছবি এবং সেখানকার কোনও হোটেল বা সংস্থার দফতরে রাখা নানা বইয়ের ছবি রয়েছে। তাতে যোগাসনের ছবিও রয়েছে। তেমনই, সঙ্গীতা অন্য অন্য দুটি প্রোফাইলের থেকে বেশ কিছু ছবিও এই অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন। তার মধ্যে একটি ফ্ল্যাটের ঘরের কয়েকটি ছবি রয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, দুটি অ্যাকোয়ারিয়ামের ছবি, দুটি স্টিলের খাট লাগোয়া জায়গা রাখা একাধিক সফট টয়ের ছবি। অ্যাকোয়ারিয়ামে একটিতে তিনটি মাছ ছাড়াও একটিতে বড় করে একটি মাছের ছবি রয়েছে। তেমনই, ‘সামওয়ান স্পেশাল’ লেখা-সহ একাধিক সফট টয়েজের ছবি। আরেকটিতে টয়েজের গায়ে লেখা রয়েছে, থ্রি ইডিয়টের ছবির বিখ্যাত ডায়লগ ‘আল ইজ ওয়েল’। তেমনই, ঘরের দেওয়ালে সুবজ পাতা এবং ছবি দেখা যাচ্ছে। তরুণীর পরিবারের দাবি, পুলিশ সেবক রোডের ফ্ল্যাটটির সঙ্গে ছবিগুলি মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, সেখানকার ছবি কি না। তেমনই, গত বছর কোনও সময় সঙ্গীতা রাজস্থানে গিয়েছিল কি না, তা-ও খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার। সেখানে গেলে তিনি কী জন্য গিয়েছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।

কমিশনারেটের পুলিশ অফিসারদের কয়েকজন জানিয়েছে, নতুন প্রোফাইলের ছবিগুলিতে সঙ্গীতার সংস্থার অনেকেরই লাইক রয়েছে। তেমনই, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫ বিষাদে ভরা একটি ছবিকে প্রোফাইল করার কারণ তাঁর দুই বন্ধু জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর দেননি সঙ্গীতা। এখনকার অনেক বন্ধুরা তাঁর তিনটি প্রোফাইলেই আছেন। তেমনই, জংশন এলাকার একটি জিম সংস্থার প্রোফাইলেও বন্ধু হিসাবে আছেন সঙ্গীতা। তরুণীর দাদা শম্ভু কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘‘বোনের একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কথা শুনছি। একই বন্ধু, সহকর্মী, সংস্থার অনেকেই সব প্রোফাইলে আছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’’

তরুণীর প্রথম যে প্রোফাইলটি মিলেছিল, সেটি ২০১৩ সালের। পরের প্রোফাইলটি গত ৩১ জুলাই অবধি সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করেছিলেন সঙ্গীতা। নতুন প্রোফাইলটির তার আগেরকার। সঙ্গীতার খোঁজে আন্দোলনে নেমেছে কাছারি রোড যুবক সঙ্ঘ। তরুণীর দাদা শম্ভুবাবু ক্লাবের সদস্য। ক্লাবের সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা মদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। ফেসবুকগুলি আরও ভাল করে পরীক্ষা করা দরকার। হয়ত বা আরও নতুন প্রোফাইলের সন্ধান মিলতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন