Underage marriage

‘আর কেউ যেন এমন ভুল না করে’

দু’বছর আগের সেই অভিজ্ঞতা কাজে দিয়েছে যুবতীর। তার পরে, অসংখ্য বাল্যবিবাহ আটকে দিয়েছেন। কিন্তু প্রতি বারই প্রশাসন-পুলিশকে আগে থেকে জানিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫৩
Share:

মধুমিতা দাস। নিজস্ব চিত্র

বঁটি হাতে পথ আগলে দাঁড়িয়েছেন এক মহিলা। পিছনে মারমুখী আরও এক দল। গ্রামের ভিতরে এমন প্রলয়কাণ্ড শুরু হবে কল্পনাও করতে পারেননি শহর থেকে যাওয়া যুবতী। হয়তো আরও প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কথা না বাড়িয়ে ফিরে যান যুবতী। গ্রামের বাড়িতে ছাদনাতলায় ফের বিয়ে শুরু হয়। এই বিয়েই বন্ধ করতে হাজির হয়েছিলেন যুবতী। বলেছিলেন, ‘‘নাবালিকা স্কুলছাত্রীর বিয়ে দেওয়া যাবে না।’’ সে কথা শুনেই তেড়ে গিয়েছিল নাবালিকার বাড়ির লোকেরা। তবে সে দিন যুবতীটি ফিরে গেলেও, হাল ছাড়েননি। নাবালিকার বাড়ি থেকে থানায় গিয়ে, আইনজীবীর কাছে গিয়ে, প্রশাসনকে ধরে ফের হাজির হন নাবালিকার বাড়িতে। এক সঙ্গে সকলকে দেখে ঘাবড়ে যায় নাবালিকার পরিবারের লোকেরা। বিয়ে থমকে যায়। দু’পক্ষ মুচলেকা দেয়। নাবালিকা এখন পড়াশোনা করছে। যুবতী বলেন, “ওই মেয়েটি আমাকে এখনও ফোন করে। বলে, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে। শুনে মনে হয়, যাক এতটুকুতো করতে পারলাম।”

Advertisement

দু’বছর আগের সেই অভিজ্ঞতা কাজে দিয়েছে যুবতীর। তার পরে, অসংখ্য বাল্যবিবাহ আটকে দিয়েছেন। কিন্তু প্রতি বারই প্রশাসন-পুলিশকে আগে থেকে জানিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে। বাল্য বিবাহের খবর হোক বা কোনও নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগ বা কোথাও বাচ্চা মেয়েদের শ্রমিকের কাজে লাগানো হয়েছে খবর পেয়েই ছুটতে হয়। একা যাওয়া সম্ভব নয় বলে কয়েক জনকে নিয়ে দল গড়েছেন জলপাইগুড়ির হাসপাতাল পাড়ার মধুমিতা দাস। বয়স ২৯। হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির চুক্তিভিত্তিক কর্মী। বাবা গাড়ির চালক ছিলেন। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসার। তবু মেয়ে চাকরির পুরো টাকাটা মা-বাবার হাতে দিতে পারেন না। মধুমিতা বলেন, “যা মাইনে পাই, তার ত্রিশ শতাংশ আগে দলের কাজে রেখে দিই।”

বেরুবাড়ির দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘‘দিদি না থাকলে,আমার বিয়ে হয়ে যেত। পড়াশোনা আর হত না। আমি এখন হোমে আছি, পড়াও চলছে।’’

Advertisement

কোথায়, কোনও নাবালিকার বিয়ে আটকানোর এত গরজ কেন?

প্রথমে মধুমিতার মন্তব্য, “সেটা ব্যক্তিগত!” মুখে যেন ছায়া নামে। তার পরে খেলে যায় রূপালি বিদ্যুৎ-রেখাও। যেন কালো মেঘের বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা আলো। মধুমিতা বলেন, “আমিও ভুল করেছিলাম। উচ্চ মাধ্যমিকের সময় পড়া ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম...। বুঝতে পেরে ফিরে ফিরে এসেছি। তখনই ঠিক করি, বাচ্চা মেয়েদের বিয়ে আটকাতে হবে। ভাগ্যিস, ফিরতে দেরি হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন