মুড়ি-আলুর দমের টানেই জমে মেলা

শীতের সকালে মহানন্দায় ঝুপ করে স্নান। তার পরে চোখা আলুর দম দিয়ে মুড়ি। চাঁচলের আশাপুর, রতুয়ার মাগুড়া ও হরিশ্চন্দ্রপুরের গোহিলায় মকর সংক্রান্তির মেলায় পবিত্র স্নানের পর আজও এটাই দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। কয়েকশো বছর ধরে মেলাগুলি বসে মহানন্দার পাড় ঘেঁষে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৪
Share:

মেলায় আলুর দমের দোকানে ভিড় বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।

শীতের সকালে মহানন্দায় ঝুপ করে স্নান। তার পরে চোখা আলুর দম দিয়ে মুড়ি। চাঁচলের আশাপুর, রতুয়ার মাগুড়া ও হরিশ্চন্দ্রপুরের গোহিলায় মকর সংক্রান্তির মেলায় পবিত্র স্নানের পর আজও এটাই দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। কয়েকশো বছর ধরে মেলাগুলি বসে মহানন্দার পাড় ঘেঁষে। তবে গোহিলায় নদী দূরে সরে যাওয়ায় মরা মহানন্দার ধারেই মেলা বসে। শনিবার মকর সংক্রান্তির পর থেকে এ বারও জমে উঠেছে মেলাগুলি। প্রতিটি মেলাতেই মুড়ি-আলুর দমের পাশাপাশি আর এক আকর্ষণ কাঠের আসবাব। মেলা চলে প্রায় একমাস।

Advertisement

প্রবীণদের কাছে জানা যায়, কৃষিপ্রধান এই এলাকায় কয়েক দশক আগেও প্রায় প্রতিটি গৃহস্থের ঘরেই রাখাল থাকত। দাদন নিয়ে এক বছরের চুক্তিতে ওই রাখালরা গৃহস্থের বাড়ি থেকে গবাদিপশু দেখাশোনা-সহ চাষবাসের কাজে সাহায্য করত। ওই রাখালেরাই চলতি কথায় বাড়ির চাকর বলে পরিচিত ছিল। মকর সংক্রান্তির পর দিন, ১লা মাঘ থেকে এক বছরের কাজের চুক্তিতে বহাল হত ওই চাকরেরা। কেন না গৃহস্থের বছর শুরু হত মাঘ মাসের প্রথম দিন থেকেই। সাতসকালে গ্রামবাসীদের সামনে পুজোপাঠ করে তাদের কাঁধে হাল ও গরু তুলে দেওয়া হত। এর পর চাষের কাজ সেরে রাখালের প্রথম কাজ ছিল মনিবের বাড়ির মেয়ে-বউদের সঙ্গে নিয়ে মেলায় যাওয়া। দু’পক্ষের কাছেই পবিত্র দিন ছিল এই মাঘ মাসের প্রথম দিন। মালিকের পরিবারের সঙ্গে মেলায় গিয়ে স্নান সেরে সস্তায় মুড়ি আর আলুর দম খেয়ে সারা দিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরতেন তাঁরা।

এখন আর রাখাল বা চাকর রাখার প্রথা নেই। তবে মাঘ মাসের প্রথম সকালে বাড়ির গবাদিপশু ও লাঙল, মইয়ের পুজো সেরে মেলায় হাজির হওয়ার সেই পুরনো রীতি আজও চাঁচল মহকুমার প্রায় প্রতিটি গৃহস্থের বাড়িতে রয়ে গিয়েছে। তাই সকাল হলেই ওই তিনটি মেলায় যাওয়ার রাস্তা জুড়ে দেখা যায় শয়ে শয়ে দর্শনার্থীদের ঢল। সঙ্গে থাকেই মেলায় গিয়ে রীতি মেনে স্নান সেরে মুড়ি-আলুর দম খেয়ে সন্ধেয় বাড়ি ফেরা।

Advertisement

সকাল থেকে প্রায় প্রত্যেকেই মেলামুখী হওয়ায় চাঁচল শহরের মতো অন্য এলাকাও বন্‌ধের মতো সুনসান চেহারা নেয়। বন্ধ থাকে দোকানপাট। প্রথম দিন স্নান, খাওয়াদাওয়া ছাড়া অবশ্য মেলায় বিশেষ কেনাকাটা কেউ করেন না। দরদাম করে বাড়ি ফিরে যান। পর দিন থেকে শুরু হয় খাট, চেয়ার, টেবিল, ড্রেসিং, ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে কাঠের হরেক আসবাবপত্রের কেনাবেচা। এ ছাড়া গৃহস্থের বাড়ি ও হেঁশেলের প্রয়োজনীয় রকমারি জিনিসও মেলায় পাওয়া যায়।

হরিশ্চন্দ্রপুরের বোড়ল এলাকার এক প্রবীণ কৈলাশচন্দ্র দাসের কথায়, ‘‘এখন বাড়িতে রাখাল রাখার সাধ্যও নেই। কেউ থাকতেও চায় না। তবে রীতি মেনে আজও মেলায় গিয়ে মুড়ি-আলুর দম না খেলে মনে হয় বছরের শুরুতে কী একটা ঘাটতি থেকে গেল।’’

চাঁচলের চণ্ডীগাছির বাসিন্দা অর্জুন দাসও বলেন, ‘‘হোক মহানন্দা। তবু এটাকেই গঙ্গাস্নান বলে মনে করি। বাড়ি থেকে না খেয়ে মেলায় গিয়ে স্নান সেরে তার পর কিছু মুখে দিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন