শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ডক্টরস ডে উপলক্ষে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য।
বৈঠক-সুপারিশ তো অনেক হয়েছে, কিন্তু হাসপাতালের পরিষেবা বাড়াতে কাজ এগোলো কতটা? চলতি সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ সফরে এসে পরপর দু’টি প্রশাসনিক বৈঠকে এমনই জানতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিষেবা আদৌ রোগীদের কাছে পৌঁছচ্ছে কি না, সেই কাজে নজরদারির নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। সেই নির্দেশ পালন করতে শুক্রবার সকাল থেকেই শিলিগুড়ি হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে দুই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান আসরে নেমে পড়েন। এ দিন থেকেই শিলিগুড়ি হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড, করিডরে অভিযোগ বাক্স বসিয়ে রোগীদের ক্ষোভ-আর্জি শোনার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আবার এ দিন-ই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন সুপারিশ-নির্দেশের কতটা রূপায়িত হয়েছে, তার রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। বিধানসভা ভোটের পরে শিলিগুড়ি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ি হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ নতুন ঘটনা নয়। কখনও এক্স-রে বা অন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম বিগড়ে রয়েছে তো কখনও ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের রাউন্ডে আসা অনিয়মিত বলে অভিযোগ। হাসপাতালে এসে রোগী এবং রোগীর আত্মীয়দের কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা জানতে এ দিন থেকে অভিযোগ সেল খোলা হয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রবাবু এ দিন এই নতুন ব্যবস্থার সূচনা করেন।
হাসপাতালে সব মিলিয়ে মোট ১৬টি বাক্স বসানো হয়েছে। বাক্সের পাশে একটি ফর্ম রাখার জায়গাও থাকবে। তাতে অভিযোগ লিখে বাক্সে ফেলে দিলেই ১২ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এক চিকিৎসককে এই অভিযোগ সেলের নোডাল অফিসারও করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল দশটায় দেখা হবে কত অভিযোগ জমা পড়েছে। তার পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা ঠিক করা হবে। পদক্ষেপ আদৌ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে নোডাল অফিসার বৈঠক করবেন। রুদ্রবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান সব হাসপাতালেই অভিযোগ শোনার ব্যবস্থা করা হোক। তাতে পরিষেবার মান বাড়বে, ভুলভ্রান্তি শুধরে নেওয়া যাবে। আমরা আজ থেকেই শিলিগুড়ি হাসপাতালে তা শুরু করে দিয়েছি।’’
অন্য দিকে, এ দিন দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে গত পাঁচ বছরের নানা সুপারিশের তালিকা এবং পদক্ষেপের খতিয়ান তলব করেছেন চেয়ারম্যান গৌতমবাবু। নানা অনিয়মে যে সব কর্মী-নার্স-চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ছিল, তার কতটা হয়েছে— তারও রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যেই এই রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আগামী মাসে নবান্নে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের
বৈঠক রয়েছে।
বৈঠকের পরে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন পরিষেবার দিক থেকে উত্তরবঙ্গের সেরা হবে এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। কোনও গাফিলতি, গড়িমসি বরদাস্ত করা হবে না। এত দিন নানা বৈঠকে কী সুপারিশ হয়েছে, এবং কী বাস্তবায়িত হয়েছে, তা-ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।’’
এ দিন সমিতির প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকের একাধিক রিপোর্ট এবং জবাব চেয়েছেন গৌতমবাবু। মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ঝোপ-আগাছা, জঞ্জালের স্তূপ নিয়মিত সাফাই হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে পানীয় জলের সরবারহ নিয়মিত থাকে না বলেও উষ্মা প্রকাশ করেন। কেন এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না জানতে চেয়েছেন গৌতমবাবু।