উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে বাংলার শিলিগুড়ি, সম্প্রীতির বাঁধন অটুট তিন দশক ধরেই

আবিরের পসরা নিয়ে শহরে কাদেররা

রাস্তায় ডিভাইডার, উড়ালপুল, এলইডি হোর্ডিং! শিলিগুড়ি শহরকে বদলে যেতে দেখেছেন কাদের আলি। বাবার হাত ধরে যখন প্রথম বার এসেছিলেন শহরে তখন কাঠের স্তম্ভে শেড লাগানো বাল্ব জ্বলত টিমটিম করে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৭ ০২:০৫
Share:

সম্প্রীতি: আবিরের পসরা নিয়ে শিলিগুড়ির পথে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

রাস্তায় ডিভাইডার, উড়ালপুল, এলইডি হোর্ডিং! শিলিগুড়ি শহরকে বদলে যেতে দেখেছেন কাদের আলি। বাবার হাত ধরে যখন প্রথম বার এসেছিলেন শহরে তখন কাঠের স্তম্ভে শেড লাগানো বাল্ব জ্বলত টিমটিম করে। এখন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। বহুতল-নিয়ন আলোর শিলিগুড়িতে আবির বিক্রি করতে। মহাবীরস্থান উড়ালপুলের নীচে ফুটপাতে আবিরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন কাদের আলি-সুলতান-মহম্মদ আলিরা।

Advertisement

গত বুধবার রাতে ব্রহ্মপুত্র মেলে কানপুর থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন। চল্লিশ জনের দল। সকলেই মুসলিম। দলের প্রবীণতম সদস্য কাদের আলি জানালেন, তিন দশক ধরে আবির বেচতে শিলিগুড়ি আসেন। দোলের পরে কয়েকদিন থেকেও যান। মুসলিম হয়ে হিন্দুদের দোল উৎসবে আবির বিক্রি করতে কোনও সমস্যা হয়নি। নিজের গ্রাম ছেড়ে এতদূরে এসেও কখনও নাকাল হতে হয়নি।

গোলাপি, সবুজ, হলুদ নীল নানা রঙের আবির। দাড়িপাল্লায় ওজন করে বিক্রি হচ্ছে। বাঁদুরে রং অথবা পিচকিরি অবশ্য কানপুরের দলের থেকে মিলবে না। ট্রেনে বস্তা চাপিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছন কানপুরের সরসল গ্রামের বাসিন্দারা। দল বেঁধে আসা এই ব্যবসায়ীরা থাকার জন্য কোনও হোটেল ভাড়া করেন না। উড়ালপুলের তলায় পলিথিন পেতে সেখানেই রাত কাটিয়ে দেন। স্টোভ জ্বালিয়ে রান্নাও ফুটপাতে। বছর পঞ্চাশের আলি মহম্মদ বলেন, ‘‘আগে তো উড়ালপুল ছিল না। রাস্তাও এত সরু ছিল না। তখন আমরা মাঠে তাঁবু ফেলতাম।’’

Advertisement

শিলিগুড়িতেই কেন? বলতে পারলেন না কানপুরেরর সরসলের বাসিন্দা কাদের আলিও। তবে জানালেন, ফি বছর এক-এক জনের হাজার দশেক টাকার আবির বিক্রি হয়। খুচরো তো বটেই পাইকারি ব্যবসায়ীরাও তাঁদের থেকে আবির নেন। সুলতানের দাবি কানপুরে তৈরি হওয়া আবিরে মাটির কনা বা ভেজাল নেই। সে কারণে বেশি বিক্রি হয়। সুলতানের কথায়, ‘‘আগাগোড়াই শিলিগুড়ি বড় শহর। সে কারণেই বোধহয় সবাই এখানে আসত।’’ স্টিম ইঞ্জিন থেকে হোয়াটস অ্যাপ-স্কাইপের বদলে যাওয়া সময়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আবির-দাড়িপাল্লা নিয়ে বসা ব্যবসায়ীদের কারও কারও মাথায় ফেজ। সম্প্রীতির ছবিও বদলায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন