বোনকে বিয়ে দিতে গিয়ে বাজারে বিপুল দেনা হয়। তার পরে ছোট একটা দোকানের জিনিসপত্র কিনতে আবার হাত পাততে হয় এলাকারই একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে। দোকান ঠিকমতো চলে না। যা রোজগার হয় তা দিয়ে বাবা-মাকে নিয়ে কোনওরকমে দিন কাটান প্রতিবন্ধী যুবক রামদুলাল মোহান্ত। কিন্তু আগামী দিনগুলো কীভাবে চলবে এই চিন্তায় তিনি একটি কিডনি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিচিত তো বটেই, অপরিচিতদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে কিডনি বিক্রির আবেদন করে এসএমএস করছেন ওই যুবক। কোচবিহারের নাটাবাড়ির ওই যুবকের এমন আবেদনে হতবাক সকলেই।
নাটাবাড়ির মান্তাপাড়ার বাসিন্দা নিতাইবাবুর ছেলে রামদুলাল। তিন বছর বয়সে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে বাঁ পা রুগ্ন হয়ে পড়ে। ওই পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে দীর্ঘ দিন ধরে। ডান পায়ের উপরে চাপ বেশি পড়ায় সেটিও এখন ভাল নেই। তার মধ্যই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রামদুলাল। বাজারে একটি ছোট্ট দোকান রয়েছে তাঁদের। রামদুলাল বলেন, “এটাই একান্তই আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আসলে আমি প্রতিবন্ধী। বিশেষ কিছু করতে পারব না। মা-বাবার বয়স হয়েছে। বেঁচে থাকতে হলে খাবার জোগাড় করতে হবে।” নাটাবাড়িরই বিধায়ক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “সরকারি নানা সুবিধে রয়েছে। ওই যুবক আমাকে কিছু জানাননি। তেমন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়ও নাটাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই যুবকের কথা শুনে বলেন, “প্রয়োজনে ওঁর বাড়িতে যাব। কেন এমন সিদ্ধান্ত, কথা বলব।”
রামদুলালের মা সীতারানিদেবীর অভিযোগ, সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধে এখনও কোনও কিছুই তাঁরা পাননি। ভিটেমাটি নিয়ে এক বিঘার মতো জমি রয়েছে। সেই জমিতে টুকটাক আনাজ হয়। সেগুলি দিয়েই খাওয়া জোটে। তাঁর কথায়, “আমরা গরিব। কষ্ট নিয়েই বেঁচে আছি।” কয়েক মাস আগে রামদুলালবাবুর বোনের বিয়ে হয়। সে সময় ৮০ হাজার টাকার মতো ঋণ হয়। সম্প্রতি দোকান জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে আরও এক লক্ষ টাকা ঋণ হয়েছে। তাই তিনি নিরুপায় বলে জানান রামদুলাল। তাঁর কথায়, “ঋণ শোধ করতে হবে। কিডনি বিক্রি ছাড়া উপায় কী?”