ডাইনি অপবাদে মোম গলিয়ে ছ্যাঁকা

কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সুকল মুর্মু। তাঁর জ্যাঠামশায় ও প্রতিবেশীরা তাঁকে নিয়ে যান এক গুনিনের কাছে। গৌরাঙ্গ পাহান নামে ওই গুনিন তাঁর ‘চিকিৎসা’ করতে গায়ের উপরে মোম গলিয়ে ফেলতে শুরু করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৬
Share:

আহত সুকল। — নিজস্ব চিত্র

কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সুকল মুর্মু। তাঁর জ্যাঠামশায় ও প্রতিবেশীরা তাঁকে নিয়ে যান এক গুনিনের কাছে। গৌরাঙ্গ পাহান নামে ওই গুনিন তাঁর ‘চিকিৎসা’ করতে গায়ের উপরে মোম গলিয়ে ফেলতে শুরু করে। তাঁকে ত্রিশূলের খোঁচাও দেন। এরপর গুনিন ‘নিদান’ দেন, সুকলের অসুখের কারণ, তাঁর সৎ মা সুমরি বাস্কে। ডাইনি অপবাদে সুমরির গায়েও জ্বলন্ত মোম গলিয়ে ফেলে ওই গুনিন। দেওয়া হয় ত্রিশূলের খোঁচাও।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ থানার রামকৃষ্ণপুর অঞ্চলের আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রাম চারকাটি এলাকার বাসিন্দা সুকল ও সুমরি তাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিন দিন ধরে বালুরঘাট থানার ভূশিলা এলাকায় ওই গুনিনের বাড়িতে রেখে তাঁদের উপরে অত্যাচার করা হয় বলে অভিযোগ।

দু’জনকে ছেড়ে দেওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে কারও কাছে মুখ খুলতেও নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। পেটে ও বুকে ঘা নিয়ে তাঁরা ভয়ে বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন। তবে প্রশাসনের কানে খবর যাওয়ার পরে ওই গুনিনকে বুধবার রাতে বালুরঘাটের ভুশিলা গ্রাম থেকে ডিএসপি সদর সৌম্যজিৎ বড়ুয়ার নেতৃত্বে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

এ দিন বিকেলেই কুমারগঞ্জের বিডিও দেবদত্ত চক্রবর্তী ঘটনার খবর পেয়ে ব্লক মেডিক্যাল অফিসারকে এলাকায় মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে আগুন ও ত্রিশূলের খোঁচায় জখম ওই দু’জনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন। বিডিও বলেন, ‘‘বিএমওএইচকেও সহায়তার জন্য বলেছি।’’ এ দিকে, ওই ঘটনাটি থানায় অভিযোগ না হয়, তার জন্য এলাকার কিছু মাতব্বর সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।

জখম সুমরিদেবী বলেন, ‘‘থানায় অভিযোগ না করতে আমাদের শাসানো হয়েছে।’’ তবে এ দিন জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃত গুনিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কুমারগঞ্জের চারকাটি এলাকার বছর সুকল বেশ কিছু দিন ধরে অসুখে ভুগছেন। গুনিনের চিকিৎসায় তাঁর অসুখ সারবে বলে এলাকার মাতব্বরের পরামর্শ দেয়। সুকল জানান, গুনিনের কথায় মাটির বেদিতে চিৎ করে শুইয়ে তাঁর বুকের উপর সাত-আটটি জলন্ত মোম ধরা হয়। গরম মোম গলে বুকে ও পেটে ফেলে ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে ঝাড়ফুঁক চলে। এ দিন জখম বৃদ্ধা সুমরিদেবীও বলেন, ‘‘গুনিন আমাকে ডেকে পাঠায়। বালুরঘাটের ভূশিলা গ্রামে তার বাড়িতে গেলে পুজো করতে হবে বলে বেদিতে বসিয়ে পায়রার গলা দাঁত দিয়ে ছিঁড়তে নিদান দেয়। পায়রাটির গলা ছিঁড়লে রক্ত মুখে নিয়ে কলাপাতায় ফেলতে বলে। এরপর আমার উপর ডাইনির ছায়া আছে বলে ঝাড়ফুঁক শুরু হয়।’’

বৃদ্ধাকে মাটিতে ফেলে কয়েকজন চেপে ধরে অনুরূপভাবে গুনিন একাধিক মোমের ছ্যাঁকা দেয় এবং বুকের উপর বসে ত্রিশূলের খোঁচা দিতে থাকে বলে অভিযোগ। সারা বুক ও পেটে ফোস্কা পড়ে জখম হয়ে রক্ত বের হতে থাকে। পর দিন তাঁদের দু’জনকে গুনিন ছেড়ে দেয়, কিন্তু ঘটনার কথা কাউকে না জানাতে হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন