পরীক্ষা: মানিকচকের যে বাড়িটিতে আগুন লেগেছিল, সেখানে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা। নিজস্ব চিত্র
পারিবারিক বিবাদে মালদহের মানিকচকে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় আরও দুই জনের মৃত্যু হল। তাতে মানিকচক থানার ডোমহাট গ্রামে একই পরিবারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ছয় জন।
সোমবার রাত ন’টা নাগাদ ঝলসানো দুই শিশু-সহ চার জনের নিথর দেহ পৌঁছয় বাড়িতে। গ্রামেরই শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করেন পরিবারের লোকেরা। রাত দেড়টা নাগাদ শ্মশান থেকে বাড়িতে ফিরেই ফের মৃত্যু সংবাদ পান পরিবারের লোকেরা। একই পরিবারের ছ’জনের মৃত্যুতে বাগ্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন আত্মীয় স্বজন থেকে পাড়াপড়শি। আরও যে তিন জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ওই ঘটনায় মৃত গোবিন্দ মণ্ডলের ভাই মাখনের স্ত্রী এবং এক পড়শি কুলেশ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত মানিকচক থানার সিভিক ভলান্টিয়ার মাখন এখনও পলাতক। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনার তদন্তে যায় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন দলের সদস্যরা। পোড়া কাপড়, পেট্রলের জার এবং পা ও হাতের ছাপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার গভীর রাতে যাঁদের মৃত্যু হয় তাঁরা হলেন গোবিন্দবাবুর স্ত্রী রাখিদেবী (২৩) এবং ভাইঝি গোপী (৮)। গোপীর বাবা বিকাশবাবু সোমবার দুপুরেই অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মারা গিয়েছেন। রাখির স্বামী এনভিএফ কর্মী গোবিন্দবাবু এবং তাঁদের দুই শিশুকন্যা শুভশ্রী, প্রিয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছে। গোপী মানিকচকের বেসরকারি এক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। তার দুই দাদা বিশাল, অলোক এবং মা ববিতা দেবী মালদহ মেডিক্যালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছে, তাঁদের অবস্থাও খুবই আশঙ্কাজনক। তাঁদের শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। মৃতদের আত্মীয় ছোটন মণ্ডল বলেন, “গোবিন্দ আমার খুড়তুতো ভাই। শিশুদের শ্মশানে নিয়ে গিয়ে কবর দেওয়া হয়। আর বিকাশ ও গোবিন্দকে দাহ করা হয়। শ্মশানের কাজকর্ম করতে রাত একটা বেজে যায়। ফলে দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফিরতেই ফের শুনতে পাই গোবিন্দর স্ত্রী ও বিকাশের মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ।”
শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার। মৃত রাখিদেবীর মা শেফালী মণ্ডল বলেন, “জামাই এবং দুই নাতনি সকালেই মারা যায়। রাতে আমার মেয়েও মারা গেল। আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমি চাই মাখনের যাতে ফাঁসি হয়।”
ধৃত মহিলাকে মঙ্গলবার মালদহ জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। কুলেশকে এ দিন দুপুরে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে রবিবার রাতে আগুন লাগাতে মাখন প্রথমে কুলেশের বাড়ির ছাদে ওঠে। তারপরে গোবিন্দ এবং বিকাশের ঘরের টালি খুলে পেট্রোল ছড়িয়ে দেয়। প্রথমে গোবিন্দর ঘরে এবং পরে বিকাশের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর বাইরে থেকে ঘরগুলোর দরজা বন্ধ করে দেয়। যাতে কেউ ঘর থেকে বের হতে না পারেন। পরিকল্পনা করেই দুই পরিবারের সকল সদস্যকে খুন করার উদ্দেশ্যে আগুন লাগানো হয়েছিল বলে অনুমান পুলিশের।
তদন্তকারী এক পুলিশ আধিকারিক জানান, মাখনের একার পক্ষে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। কুলেশ এবং আরও একজন মাখনকে সহযোগিতা করেছে। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার বলেন, “দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। মাখনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”