নতুন ক্লাস শুরু হয়েছে বছরের প্রথম দিন থেকেই। সরকারি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বই দেওয়া হয় সরকারের তরফে। বছরের দ্বিতীয় দিনে ‘বুক ডে’-তে সমস্ত বই পৌঁছে যাওয়ার কথা স্কুলগুলোয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, নতুন ক্লাস শুরুর দুই সপ্তাহ পরেও জলপাইগুড়ির চা বলয়ের নেপালি ও হিন্দি মাধ্যমের বেশ কিছু স্কুলে পৌঁছয়নি সব বই। এই পরিস্থিতিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর পরে অর্ধেক মাস কেটে গেলেও সেইসব স্কুলে পড়াশোনা থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ পড়ুয়া ও শিক্ষকদের।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় জেলার সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া সার্কেল মেটেলি। কিন্তু সেই ব্লকের প্রাথমিক স্কুলগুলোয় এখনও পাঠ্যবই পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। নেপালি ও হিন্দি মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি, সব ক্লাসেই বই পৌঁছয়নি। পাশেই রয়েছে মালবাজার। সেখানে কিছু স্কুলে বাংলা মাধ্যমের বইও পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকা রাজগঞ্জে কিছু হিন্দি এবং নেপালি মাধ্যমের স্কুল রয়েছে। বই নিয়ে সমস্যা দেখা গিয়েছে সেখানেও।
হিন্দি মাধ্যমের প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ‘মজারু’ নামে একটি সাধারণ জ্ঞানের বই রয়েছে। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত পড়ুয়ারা তা হাতে পায়নি। সব মাধ্যমের স্কুলেই প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্য়ন্ত রয়েছে তিন খণ্ডের ‘আমার বই’। কিন্তু কোনও ক্লাসে দ্বিতীয় খণ্ড পৌঁছেছে, আবার কোথাও এসে পৌঁছেছে বইয়ের তৃতীয় খণ্ড। ফলে ঠিকমতো পড়াশোনা শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে বলে শিক্ষকদের একাংশের দাবি। হিন্দি মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণিতে কিশলয় এবং পরিবেশের বই পাঠক্রমে রয়েছে। চা বাগানের স্কুলগুলোতে সেটাও পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
জেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডিসেম্বর থেকেই বই মজুত করার কাজ শুরু হয়ে যায়। যাবতীয় কাজ শেষ করে বুক-ডে’তে পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কথা।
জলপাইগুড়ি জেলার প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক মৃন্ময় ঘোষ বলেন, “বইয়ের ঘাটতি আছে এমন নয়। কিছু বই সময়মতো আসেনি। দ্রুত সেগুলো চলে আসবে।” বই না পৌঁছনোয় যানজটকে কারণ হিসেবে জানিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তাদের দাবি, যানজটের কারণে একাধিক ট্রাক মালদহ-সহ দক্ষিণবঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যদিও, প্রশাসনের অন্য একটি সূত্রের দাবি, হিন্দি এবং নেপালি বই ছাপা হতে সময় লাগছে। শেষ মুহূর্তে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছিল। সেগুলো সংশোধন করে নতুন ভাবে ছাপতে সময় লাগছে।
লোকসভা ভোটের বছরে স্কুলে স্কুলে সময়মতো বই না পৌঁছনোয় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা স্কুলে পৌঁছে দিতে প্রশাসন যতটা তেড়েফুঁড়ে নেমেছে, চা বলয়ে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছতে তার ছিঁটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝাঁ বলেন, “শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া ব্লকে বইয়ের ঘাটতি হলে সেই এলাকা আরও পিছিয়ে পড়বে। এই সহজ কথা প্রশাসনের আগে উপলব্ধি করা উচিত ছিল।” বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি গোস্বামীর অভিযোগ, “রাজ্য সরকার চা বাগান নিয়ে এত কথা বলে অথচ প্রাথমিক স্কুলে বই পৌঁছে দিতে পারে না।” নাগরাকাটার তৃণমূল বিধায়ক শুক্রা মুণ্ডার পাল্টা অভিযোগ, “বই নিয়ে বিজেপি উস্কানি দিচ্ছে। দ্রুত বই পৌঁছে দিতে জেলার শিক্ষা সংসদের সঙ্গে কথা বলেছি।”