Ingrej Bazar

ভয়াবহ বিস্ফোরণ ইংরেজবাজারে, ফিরে এল পার্সেল বোমা কাণ্ডের স্মৃতি

শহরের মধ্যে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ আগে দেখেছেন কিনা তা মনে করতে পারছেন না স্থানীয়রা।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৭:০৫
Share:

দুর্ঘটনাস্থল: বিস্ফোরণে দুমড়ে গিয়েছে টোটো। নিজস্ব চিত্র

বুধবার বিকেল সাড়ে চারটে। ইংরেজবাজার শহরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঘোড়াপীর সংলগ্ন ঘোষপাড়া এলাকায় তখন লকডাউনে ধীর লয়ে চলেছে জীবন। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল এলাকা। পরে স্থানীয়রাই শোনালেন নিজেদের আতঙ্কিত হয়ে পড়ার কথা। জানালেন, শব্দের অভিঘাতে কারও বাড়ির জানলা-দরজার কাচ ভেঙে পড়ে, কারও বাড়ির টালির ছাউনি ভেঙে পড়ে। পাকা বাড়িও নড়ে ওঠায় ধাঁধা লেগে যায় স্থানীয়দের। অনেকেই পড়িমড়ি করে বেড়িয়ে আসেন বাড়ির বাইরে। তাঁরাই জানাচ্ছেন, বেরিয়েই দেখেন রাস্তায় তখন পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন দেহের অংশ।

Advertisement

শহরের মধ্যে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ আগে দেখেছেন কিনা তা মনে করতে পারছেন না স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, এমন ঘটনা একেবারে নজিরবিহীন। এমনকি, শহরে বিস্ফোরণের ইতিহাসেও। স্থানীয় বাসিন্দা দোলন ঘোষ বলেন, “প্রথমে মনে হয়েছিল বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ফেটেছে। পরে বাড়ির বেরিয়ে দেখি আমাদের জানলায় রক্তাক্ত হাতের অংশ ঝুলে রয়েছে। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ভরে হয়ে গিয়েছে। কী হয়েছে, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।” রিম্পা রায়, সাবিত্রী রায়েরা বলেন, “বিকট শব্দে বাড়ির টালির ছাউনি ভেঙে পড়ে। জানলা-দরজার কাচ ভেঙে যায়। বেরিয়ে দেখি, ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে রয়েছে একটি টোটো।”

এ সব দেখেশুনে তাই বোমা বিস্ফোরণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্থানীয়রা। তাঁদের প্রশ্ন, টোটোর ব্যাটারি থেকে কি এমন বিস্ফোরণ হতে পারে? মালদহ কলেজের রসায়নের শিক্ষক শুভঙ্কর চৌধুরী বলেন, “মাত্রাতিরক্ত গরম হয়ে গেলে ব্যাটারি বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে। আর জোড়া ব্যাটারি একসঙ্গে ফাটলে প্রচণ্ড শব্দও হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন।”

Advertisement

এ দিনের বিস্ফোরণের ভয়াবহতা দেখে অনেকেরই মনে পড়ছে এক দশক আগে শহরের মধ্যে পার্সেল বোমা কাণ্ডের স্মৃতি। তাঁদের দাবি, এক দশক আগে শহরের মালঞ্চপল্লি এলাকায় এক স্কুল শিক্ষিকাকে পার্সেল বোমা পাঠিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। তবে এ দিনের মতো ওই বিস্ফোরণের তীব্রতা এত ভয়াবহ ছিল না। প্লাইবোর্ড, আঠা এবং নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে টোটোটি ঘোড়াপীর মোড় থেকে কৃষ্ণপল্লির দিকে যাচ্ছিল। মাঝরাস্তায় এই বিস্ফোরণ। তাতে চালকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

বিস্ফোরণের ভয়াবহতার বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাদেরও। গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাদের দাবি, “মালদহের একপাশে বাংলাদেশ এবং অপর প্রান্তে বিহার ও ঝাড়খণ্ড সীমানা। আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং রাজ্যের সীমানা ব্যবহার করে চোরাকারবারিরা। তারা এই রুটে কখনও গরু, কখনও জাল নোট, কখনও মাদক আনা-নেওয়া করে। তেমন কোনও বেআইনি কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।’’ তাই বিস্ফোরণ কাণ্ডটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন