গেট থেকে রাস্তা, মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষোভ অশোকের

রাস্তা তৈরি থেকে ‘শিলিগুড়ি গেট’ নির্মাণ। কোনও কাজে দুর্নীতি, কোথাও অর্থের অপচয়ের সঙ্গে নেতা-মন্ত্রীদের যুক্ত থাকার অভিযোগ। তাই নিয়ে বিশদে তদন্তের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন মেয়র তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:০৩
Share:

রাস্তা তৈরি থেকে ‘শিলিগুড়ি গেট’ নির্মাণ। কোনও কাজে দুর্নীতি, কোথাও অর্থের অপচয়ের সঙ্গে নেতা-মন্ত্রীদের যুক্ত থাকার অভিযোগ। তাই নিয়ে বিশদে তদন্তের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন মেয়র তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। শুক্রবার মেয়র ওই চিঠি জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘গত ১৭ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছি। যে হেতু আগামীকাল, শনিবার মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিঙে যাবেন, তাই বিষয়টি জনসমক্ষে জানালাম। আশা করি তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’’

Advertisement

ওই চিঠিতে মেয়র লিখেছেন, শিলিগুড়ি শহরের উপকন্ঠে একটি রাস্তার মান নিয়ে শাসক দলের এক মন্ত্রীই অভিযোগ তুলেছেন। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে তিনি আরেক মন্ত্রীর ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ রাস্তার কাজের মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন এক ঠিকাদার দেবাশিস প্রামাণিকের বিরুদ্ধে। যিনি পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভা কেন্দ্র ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পদে রয়েছেন। দেবাশিসবাবু ওই রাস্তার কাজ শেষ হয়নি ও কোথাও ত্রুটি থাকলে তা ঠিক করে দেওয়া হবে বলে আগেই দাবি করেছেন। গৌতমবাবুও একাধিকবার জানিয়ে দেন, তিনিই ওই এলাকায় রাস্তার কাজের মান নিয়ে অবিযোগ পেয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে জানিয়েছিলেন। শিলিগুড়ির মেয়র সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে চিঠিতে তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। উপরন্তু, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী থাকাকালীন গৌতমবাবুর উৎসাহে যে শিলিগুড়ি গেটের নির্মাণ হচ্ছে তার নকশায় এবং নির্মাণে ত্রুটি থাকায় দেড় কোটি টাকারও বেশি অর্থের অপচয় ঘটবে বলে অভিযোগ।

অশোকবাবুর এ সব বক্তব্যের কোনও উত্তর দিতে চাননি পর্যটন মন্ত্রী। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর সফরে নিজেকে প্রাসঙ্গিক করতেই অশোকবাবু এ সব অভিযোগ তুলছেন। মেয়র বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির খড়িবাড়ির পানিট্যাঙ্কি এলাকায় একটি চা-বাগানের জমি অবৈধ কেনাবেচার চেষ্টা নিয়ে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের যুক্ত থাকার অভিযোগ সামনে এসেছে। শাসক দলের নেতা-কর্মীদের মদতে সরকারি জমি, নদীর চর দখল, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি নতুন সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদেরই দলের লোকজন যুক্ত বলে মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ মেয়রের দাবি, উত্তরবঙ্গে একটি দফতরের কাজ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ১৫ শতাংশ কমিশন দিতে হয়।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পরও উত্তরবঙ্গে কর্মসংস্থানের জন্য কোনও শিল্প না হওয়া নিয়েও অভিযোগ করেছেন মেয়র। বন্ধ চা বাগান না খোলা, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির সুবিধা এখনও সরকারি ভাবে ঘোষণা না করা নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ করেছেন টি পার্ক, ড্রাই পোর্ট, বিধাননগরে আনার কেন্দ্র, বেসরকারি এবং তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র অসমাপ্ত হয়ে পড়ে থাকা নিয়ে। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, কৃষি মাণ্ডি তৈরি করেও সঠিক ভাবে চালু করতে না পারা নিয়ে। শাসক দলের ক্ষমতায় থাকা পুরসভাগুলির একাংশে দুর্নীতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

মেয়রের কথায়, পাহাড় সফরে এলেই মুখ্যমন্ত্রী কোনও উন্নয়ন বোর্ড ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যেই তরাই-ডুয়ার্স উন্নয়ন কমিটি নামে একটি বোর্ড করেছেন। এ সব সংস্থা আইনগত এবং সরকারের নীতিগত অবস্থান জানতে চেয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদকে সক্রিয় করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাল ফেরাতে, ওষুধ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়গুলি দেখতে হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন