ব্যস্ত: প্রতিমা গড়ছে সুমতিদেবী। নিজস্ব চিত্র
বয়স প্রায় সত্তর ছুঁয়েছে। বয়সের ভারে শরীর কিছুটা অশক্ত হলেও মনের জোরকে সম্বল করে গড়ে চলেছেন দেবীপ্রতিমা। মূতি তৈরি শুধু পেশা নয়, নেশাও, বলছেন মৃৎশিল্পী সুমতি পাল।
পুজো আসছে। ব্যস্ততা তুঙ্গে সুমতিদেবীর। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গড়ছেন দুর্গাপ্রতিমা। তাঁর স্বামী ভূদেব পালও মৃৎশিল্পী ছিলেন। ১৯৮২-তে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তারপরে সংসার চালাতেই স্বামীর পেশাকে আপন করে নিয়েছিলেন সুমতি। জলপাইগুড়ির ভাটিয়া বিল্ডিং সংলগ্ন বাঘাযতীন কলোনিতে থাকেন তিনি। সেখানকারই এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এক চিলতে জমিতে তাঁর ছোট কারখানা। সুমতি বলেন, ‘‘স্বামীর কাছেই প্রতিমা গড়ার হাতেখড়ি। তারপরে মূর্তি বেচে সংসার চালিয়েছি। বাচ্চাদের পড়াশোনা করিয়েছি, বিয়ে দিয়েছি।’’ তাঁর মেয়ের ঘরের নাতি শান্ত সিংহ এখন তাঁর সহকারী। কাঠামো বানানো, মাটির কাজে হাত লাগায় পাড়াতুতো নাতিরা। ক্রেতা জোগাড়ের ক্ষেত্রেও নাকি সিদ্ধহস্ত তারা।
পুজোর আগে নাওয়া-খাওয়ার কথা মাথায় থাকে না সুমতিদেবীর। সকাল থেকেই পড়ে থাকেন কারখানায়। আর সময়মতো ঠাকুমার কাছে খাবার পৌঁছে দেয় আদরের নাতনি। এ বছর ৭টি মূর্তি বানাচ্ছেন সুমতিদেবী। একচালা নয়, ‘তিন পুতুল’ এর দুর্গামূর্তি বানানোতেই জোর দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বড় বাজেটের পুজো কমিটি আমার কাছে আসে না। ওরা যায় নামকরা কারিগরদের কাছে। তাই ছোট পুজোর কথা মাথায় রেখেই মূর্তি বানাই।’’
এই বয়সেও নিখুঁত প্রতিমা গড়ে তোলেন সুমতিদেবী। থিমের প্রতিমা তাঁর পছন্দ নয়। বলেন, ‘‘সাবেকিয়ানা শ্বাশত। মায়ের পরিচিত রূপই ফুটিয়ে তুলি।’’ পেটের টানে একদিন স্বামীর ভালবাসার কাজটি আপন করেছিলেন। ৩৫ বছর পার করে যা আজ তাঁরও ভালবাসা।