নানা সমস্যায় দুই জেলায় হোঁচট খাচ্ছে ধান কেনা

ফড়ের ধান এল ভটভটি চেপে 

ধান ক্রয় কেন্দ্রের সব জায়গা থেকেই এমন ভাবে ফড়ের দাপটের অভিযোগ উঠছে। কে কবে ধান বিক্রি করবেন, তার তালিকা তৈরি করছেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানরা। ওই তালিকা হিসেবেই ধান কেনা হচ্ছে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
Share:

বেচাকেনা: কোচবিহারের একটি ধান ক্রয় কেন্দ্রে, সোমবার। নিজস্ব চিত্র

তখন সকাল সাড়ে ১১টা। দু’টি ভটভটি কানায় কানায় ভর্তি হয়ে পৌঁছল সরকারি ধান বিক্রয় কেন্দ্রে। কার ধান, প্রশ্ন করতেই উত্তর এল, ‘সহিদুলে’র। কৃষক? না পাইকার। তার পরেই পাল্টা জবাব এল: আজ ধান নেওয়া হবে না। ভটভটি নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল দু’জন। সরকারি কেন্দ্রে তখন দুই সরকারি কর্মীর সামনে বসে রয়েছেন এক কৃষক আজিজার রহমান। তিনি বলেন, “আমি ধান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সময় দেওয়া হয়েছে আরও দশ দিন পরে। অথচ পাইকার’রা ধান বেচে যাচ্ছে রোজই!” কোচবিহারের ঘুঘুমারি পাটিহাটি সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রের সোমবারের ছবি এমনটাই। কর্মীরা অবশ্য জানালেন, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। পঞ্চায়েত প্রধান কৃষকদের তালিকা তৈরি করে দেন। তার পর পরিচয়পত্র দেখেই ধান কেনা হয়।

Advertisement

ধান ক্রয় কেন্দ্রের সব জায়গা থেকেই এমন ভাবে ফড়ের দাপটের অভিযোগ উঠছে। কে কবে ধান বিক্রি করবেন, তার তালিকা তৈরি করছেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানরা। ওই তালিকা হিসেবেই ধান কেনা হচ্ছে। অভিযোগ, সেই সুযোগে ধান কেনার ক্ষেত্রে বড় দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে।

খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, একটি কেন্দ্রে রোজ ৬০ কুইন্টাল করে ধান কেনা হচ্ছে। রোজ দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষি ওই সুযোগ পাবেন। কারা পাবেন, সেই তালিকা তৈরি করে দেন প্রধানরা। ঘুঘুমারির ওই কেন্দ্রে সপ্তাহে চার দিন ধান কেনা হয়। মঙ্গল, বুধ, শুক্র ও শনিবার। ছুটি থাকলে অবশ্য ধান কেনা বন্ধ থাকে। পানিশালার পহরুদ্দিন মিয়াঁ জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করেছেন। এর মধ্যেই তিনি চল্লিশ মন ধান ফড়ের কাছে বিক্রি করেছেন। সোমবার একটি সমবায় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে যান তিনি। তাঁর কথায়, “এই ধান বিক্রির টাকায় আলু চাষ করছি। তাই নগদের প্রয়োজন। এখানে ধান বিক্রির তারিখ নিতে হয়। টাকা কবে অ্যাকাউন্টে যাবে, তারও নিশ্চয়তা নেই।”

Advertisement

অভিযোগ, বহু কেন্দ্রেই কৃষকদের পরিকল্পনা করেই হয়রানি করা হয়। একজন কৃষককে ধান বিক্রির তারিখ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১০-১৫ দিন সময় দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কৃষকের আনা ধান থেকে ধলতা বাদ দেওয়া হয়। চাষিদের দাবি, এই পদ্ধতিতে লাভের থেকে তাঁদের হয়রানি বেশি। তাই শেষ অবধি তাঁরা ফড়ের উপরেই ভরসা করেন। সেই সুযোগে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কুইন্টালে ধান কিনে নেয় ফড়েরা। পরে সেই ধান বিক্রি করে দেয় সরকারি কেন্দ্রে।

নিয়ম অনুযায়ী একজন কৃষক সব থেকে বেশি ৪৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন। ফড়েরা নানা ফন্দিফিকির করে তার থেকে অনেক বেশি ধান বিক্রি করছে বলে অভিযোগ। এক চাষির কথায়, “আমাদের কষ্ট করেই দিন চলছে।” খাদ্য সরবারহ দফতরের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, তাঁদের অভিযোগ জানানোর সেল রয়েছে। টোল ফ্রি নম্বর রয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন