সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমবে

ঠান্ডার দাপটে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি উঠেছে। মৃতদের মধ্যে একজন বিএসএফ জওয়ান। কুয়াশার কারণে এ দিন ট্রেন চলাচলও বিঘ্নিত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৯
Share:

বিপজ্জনক: আলো না জ্বালিয়ে কুয়াশার মধ্যে চলাচল। নিজস্ব চিত্র

বাংলাদেশ লাগোয়া এলাকার উপরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত টেনে নিচ্ছে জলীয় বাতাস। বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিকেলের পর থেকে কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে সড়ক-প্রান্তর। কনকনে ঠান্ডায় মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে উত্তরবঙ্গে। ঠান্ডার দাপটে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি উঠেছে। মৃতদের মধ্যে একজন বিএসএফ জওয়ান। কুয়াশার কারণে এ দিন ট্রেন চলাচলও বিঘ্নিত হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পুর্বাভাস—সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমবে।

Advertisement

সোমবার রাত থেকেই কুয়াশা বাড়তে থাকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে। সকাল ৬টা নাগাদ কুয়াশায় শিলিগুড়ির রাস্তার দৃশ্যমানতা একেবারেই কমে যায়। হাসমকিচকে দাঁড়িয়ে কয়েক পা দূরের মহাবীরস্থান উড়ালপুল দেখাই যাচ্ছিল না। সকালে সাড়ে দশটায় গাজোলের ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কের এক দিকে দাঁড়িয়ে অন্য দিক দেখা যায়নি। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে যাতায়াত করা একাধিক ট্রেনের এ দিন দেরি হয়েছে। কলকাতা থেকে আসা কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ৬ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে চলেছে। গুয়াহাটির থেকে দিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেস এনজেপিতে পৌঁছেছে তিন ঘণ্টা পরে। অওধ অসম এবং আনন্দ বিহার এক্সপ্রেস চলাচল করেছে নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পরে।

শীতের কামড়ে মৃত্যুর খবর এসেছে আলিপুরদুয়ার এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। ডুয়ার্সের শামুকতলা ধানহাটির একটি শেডের নীচে এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয় মঙ্গলবার। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ভিক্ষে করতেও বের হননি। গত সোমবার সন্ধ্যায় ঠান্ডায় কাঁপতে দেখে বাসিন্দাদের কেউ সামনে আগুন জ্বালিয়ে ওম পোহানোর ব্যবস্থা করেন, কেউ খাবার, গরম পোশাকও দেন বলে দাবি। কিন্তু তাতে তাঁকে বাঁচানো যায়নি। এ দিন সকালে পুলিশ মহিলার দেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ঠান্ডার কারণেই অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার পিডব্লিউডি পাড়া এলাকার বাসিন্দা চন্দন মাহাতো (৩৬) গাড়ি থেকে মাল ওঠানামা করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে জানানো হয়। মৃতের দাদা দিলীপ মাহাতোর দাবি, ‘‘প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে ভাইয়ের মৃত্যু হয়।’’ মঙ্গলবারেও এই জেলায় শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত। বালুরঘাটের পতিরাম বিএসএফ ফাঁড়ির এক জওয়ান ঠান্ডার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে সহকর্মীদের দাবি। সকালে ডিউটিতে যেতে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে তিনি স্নান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে গুরলি মালাপ্পা (৪৫) নামে কর্ণাটকের বাসিন্দা ওই জওয়ানকে মৃত বলে জানানো হয়।

Advertisement

কুয়াশার কারণে মালদহেই গত কয়েকদিনে একাধিক দুর্ঘটনা হয়েছে। এ দিনও দেখা গেল মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়কে দ্রুত গতিতে ছুটছে যানবাহন। তবে আলো জ্বালানোর কোনও বালাই নেই। অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির অভাবে আলো না জ্বালিয়ে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বাড়ছে। মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রকল্পে আমরা চালকদের সারা বছর সচেতন করি।”

সমতলে কুয়াশা থাকলেও পাহাড়ে তুলনামূলক কুয়াশা কম। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘পাহাড়ে কুয়াশা কম। তবে উত্তর সিকিমে তুষারপাত চলছেই। তার জেরেই সমতলের হাওয়া বেশি কনকনে হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন