বালুরঘাটের নির্মীয়মাণ নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র।—নিজস্ব চিত্র
নাটকের শহর বালুরঘাট। দক্ষিণ দিনাজপুরের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েই সেই নাটকের উপরেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিলেন।
তপনের বিধায়ক তথা মন্ত্রী বাচ্চুবাবু বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে যান। সেখানে নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রের কাজকর্ম নিয়ে খোঁজখবর নমেন। পরে বাচ্চুবাবু বলেন, ‘‘দফতরের অধীন অসমাপ্ত কাজগুলি শেষ করাই প্রথম লক্ষ্য। বালুরঘাটে অসামাপ্ত উত্তরবঙ্গ নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রটির কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করব।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রটির পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হলেও গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সাউন্ড, আলো, নাট্য গবেষণার জন্য আনুষাঙ্গিক যন্ত্র ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর কাজ এখনও বাকি।
মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে বালুরঘাট পুলিশ লাইনের পিছনে ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের চকবাখর মৌজায় ২ একর সরকারি খাস জমির উপর উত্তরবঙ্গ নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তুলতে তিন বছর আগে কাজ শুরু হয়। সে সময় রাজ্য সরকার এই খাতে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা খরচ করে সীমানা পাঁচিল থেকে মূল ভবন এবং মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বিদ্যুদয়ন সহ সাউন্ড-সিস্টেম এবং ব্ল্যাক বক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনও বাকি। প্রকল্প-খরচও বেড়ে গিযেছে। কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ করতে অতিরিক্ত ব্যয়-বাজেট (অ্যাডিশনাল এস্টিমেট) করা হচ্ছে।
জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরে নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রের টাকা এসে পড়ে ছিল। শহরের মধ্যে এত বড় মাপের নাট্যচর্চা কেন্দ্র তৈরির মতো জায়গা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে প্রথম দিকে সমস্যা হয়। শেষ পর্যন্ত চকবাখর এলাকায় কেন্দ্রটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়।’’ কেন্দ্রটিতে নাটকের গবেষণাগার, নাট্য সংগ্রহশালা, অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম, কম্পিউটার, ডিজিটাল শব্দ ও আলো সহ সৌন্দর্যায়নের রকমারি ব্যবস্থা করার কথা। নাট্য গবেষকদের ফেলোসিপ দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকছে।
২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালুরঘাটে উত্তরবঙ্গ নাট্য আকাদেমি গড়ার কথা ঘোষণা করেন। সে সময় এর জন্য ৫ কোটি টাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে বরাদ্দ করা হয়। প্রখ্যাত নাট্যকার হরিমাধব মুখোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের নাটকের দলগুলির সমস্যা ও সমাধানের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান।
২০১৩ সালের মাঝামাঝি রাজ্যের শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক বিভাগের সচিব তথা বর্তমান সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বালুরঘাটে আসেন। প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর তৈরি হয় চুড়ান্ত প্রকল্প রিপোর্ট। প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বালুরঘাটে উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরি নিয়ে বৈঠকও হয়। কিন্তু শহরের নাটকের দলগুলির প্রতিনিধিদের ওই বৈঠকগুলিতে ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ। বালুরঘাটে ত্রিতীর্থ, নাট্যকর্মী, নাট্যমন্দির, স্বজন, নাট্যতীর্থ, সৃজন, শপথ, নাট্য সংসদের মতো ৯ থেকে ১০টি নাটকের দল নাটক মঞ্চস্থ করে। জেলা জুড়ে নাটকের দল রয়েছে ২০ থেকে ২৫টি।
ত্রিতীর্থ নাট্যমঞ্চের কর্ণধার তথা প্রখ্যাত নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা হরিমাধব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১১ সালে একবার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের তরফে বৈঠক হয়। তারপরে আর কোনও সময় আমাকে ডাকা হয়নি। ফলে এখন ঠিক কী হচ্ছে জানা নেই।’’ নাট্যকর্মীর অমিত সাহা এবং সৃজনের তুহিনশুভ্র মন্ডলের বক্তব্য, ‘‘শহরের মধ্যে নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র হলে নাটক দেখতে মানুষের উৎসাহ থাকতো।’’ জেলাশাসক তাপসবাবু বলেন, ‘‘এই মুহুর্তে উৎকর্ষ কেন্দ্রটি গড়ার কাজ শেষ করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নাট্যকর্মীদের নিয়েই তা করা হবে।