বন্দিদের হাতে মালদহের সংশোধানাগারে রেহাই নেই রক্ষীদেরও

জেলেই ‘অবাধ’ সাম্রাজ্য বকুলের

মালদহ জেলে কার মদতে বন্দিরা কারারক্ষীদের মারধরের সাহস পেল!  শনিবার সকালে ঘটনার পরেই একটি নামই ঘুরছে প্রশাসন থেকে পুলিশ মহলে। সকলেরই বক্তব্য, কালিয়াচকের নওদা যদুপুরের দুষ্কৃতী বকুল শেখেরই ‘কীর্তি’ এটা।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ০২:৪৭
Share:

আক্রান্ত: মালদহ সংশোধনাগারে বন্দিদের হাতে মার খেয়ে আহত কারারক্ষীরা। নিজস্ব চিত্র

মালদহ জেলে কার মদতে বন্দিরা কারারক্ষীদের মারধরের সাহস পেল! শনিবার সকালে ঘটনার পরেই একটি নামই ঘুরছে প্রশাসন থেকে পুলিশ মহলে। সকলেরই বক্তব্য, কালিয়াচকের নওদা যদুপুরের দুষ্কৃতী বকুল শেখেরই ‘কীর্তি’ এটা।

Advertisement

বকুল এই জেলে বন্দি অবস্থায় রীতিমতো একটা সাম্রাজ্য চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। নওদা যদুপুর বছরদুয়েক আগে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরেই গুলি-বোমা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বকুল ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাকির শেখের গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীরা। খুন পাল্টা খুনে তপ্ত হয়ে থাকত এলাকা। এখন অনেক শান্তি ফিরেছে গ্রামে। পুলিশ বকুল, জাকির-সহ তাদের ঘনিষ্ঠ সার্জেন শেখ, ইব্রাহিম মোমিন, পোলা শেখ, মাসিদুর রহমাব, এস্তাজুল শেখ, ইমরান খানের মতো একাধিক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে খুন, বোমাবাজি, অপহরণ, ছিনতাই এর মতো মামলা রয়েছে। এখন প্রত্যেকেই রয়েছে মালদহ জেলা সংশোধনাগারে। কিন্তু ওই এলাকায় শান্তি ফিরলেও নিত্য অশান্তিতে জেরবার জেল চত্বর। অভিযোগ, সংশোধনাগারেও তোলাবাজি চালাচ্ছে বকুল।

সংশোধনাগারে কী ভাবে তোলাবাজি চালাচ্ছে বকুলরা? এক বিচারাধীন বন্দির আত্মীয় বলেন, “নতুন বন্দি জেলে গেলেই পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা করে তোলা চাওয়া হয়। তোলার টাকা দিলে ঘুমোনো থেকে শুরু করে খাওয়া। কোনও অসুবিধে হবে না বলে আশ্বাস মেলে। টাকা না দিলেই মারধর করা হয়।” বকুলের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সপ্তাহখানেক আগেও এক বন্দি বিচারকের কাছে একই নালিশ জানিয়েছিল। অভিযোগ, জেলে বসেই যদুপুরের কারবার চালায় বকুল। সংশোধনাগারের এক কারারক্ষী বলেন, ফোন বাইরে থেকে জেলের ভিতরে ছুড়ে দেওয়া হয়। আর মোবাইলের সিম আদালতে যাওয়ার পথে সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। তিনি এও বলেন, সিম কার্ড প্লাস্টিকে মুড়িয়ে জল দিয়ে ওষুধের মতো গিলে নেয়। আর পরে জেলে গিয়ে গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে সিম বার করে।

Advertisement

মালদহের মতো কলকাতার আলিপুর সংশোধনাগারেও একই ভাবে মোবাইলের সিম, মোবাইল, ব্লেড, এমনকি মাদকও পাচার হয়ে থাকে। এই অভিযোগে শুক্রবার রাতে ওই জেল হাসপাতালেরই চিকিৎসক অমিতাভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক অমিতাভ ২০১৪ সালে আলিপুর সংশোধনাগারের হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। নিয়োগের কয়েক বছরের মধ্যেই বন্দিদের অত্যন্ত ‘কাছের লোক’ হয়ে ওঠেন ৫৭ বছরের এই চিকিৎসক। কারা দফতরের একাধিক কর্তার চিকিৎসকও ছিলেন তিনি। কিন্তু কী কারণে বন্দিরা তাঁকে পছন্দ করে, তার কারণ অনুসন্ধান শুরু করেন কারা দফতরের কর্তারা। ওই দফতর সূত্রের খবর, জেলের বন্দিদের হাতে মাদক, মোবাইল ফোন, ব্লেড পৌঁছে যাচ্ছে জানতে পেরে গোপনে তদন্ত নামেন কারাকর্তারা। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ওই চিকিৎসকই জেলকর্মীদের একাংশের সাহায্য নিয়ে বন্দিদের কাছে সেই সব নিষিদ্ধ জিনিস তুলে দিচ্ছেন। এর পরেই নড়েচড়ে বসেন আলিপুর জেলের কর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement