মালদহে দুষ্কৃতীরা মারল পুলিশকেই

বারবার তোলাবাজির অভিযোগ পাওয়ার পরে মঙ্গলবার রাতে পুলিশের একটি বড় দল টহলদারি দিতে নামে মালদহের মহদিপুর পিয়াসবাড়ি এলাকায়। কিন্তু ফাঁড়ি থেকে মাত্র একশো মিটার দূরেই সেই দুষ্কৃতীদের হাতেই আক্রান্ত হলেন এক পুলিশকর্মী। তাঁর বাঁ হাতে গুরুতর আঘাত লেগেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০২:১৯
Share:

গাড়ির মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি। — নিজস্ব চিত্র

বারবার তোলাবাজির অভিযোগ পাওয়ার পরে মঙ্গলবার রাতে পুলিশের একটি বড় দল টহলদারি দিতে নামে মালদহের মহদিপুর পিয়াসবাড়ি এলাকায়। কিন্তু ফাঁড়ি থেকে মাত্র একশো মিটার দূরেই সেই দুষ্কৃতীদের হাতেই আক্রান্ত হলেন এক পুলিশকর্মী। তাঁর বাঁ হাতে গুরুতর আঘাত লেগেছে। দুষ্কৃতীরা একটি গাড়ি করে গিয়ে তাঁকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারে। সেই লাঠিতে পেরেক লাগানো ছিল। তাতেই জখম হন পিয়াসবাড়ি ফাঁড়ির কনস্টেবল প্রাণজিৎ কুমার। তাঁকে মালদহ মেডিক্যাস কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

এই ঘটনার পরে ওই রাতেই পুলিশের একটি বড় দল দুষ্কৃতীদের সন্ধানে তল্লাশিতে নামে। ৯ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। একটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই গাড়ি থেকে মিলেছে একটি পাইপগান, দুই রাউন্ড গুলি এবং একটি হাঁসুয়া। বুধবার ধৃতদের পেশ করা হয়েছে মালদহ জেলা আদালতে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটি চক্র কাজ করে। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে মূল অপরাধীকে ধরার চেষ্টা করা হবে। গাড়ির মালিকের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’ পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পরিবহণ কর্মী এবং ব্যবসায়ীরা। মহদিপুর এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় আমরা খুবই আতঙ্কিত। এমন চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা উৎসাহ হারাবেন।’’

এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারত-বাংলাদেশ সংযোগকারী মালদহের ইংরেজবাজারের মহদিপুর সড়কে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক আমদানি-রফতানি সীমান্ত কেন্দ্রে পণ্য বোঝাই ট্রাকের চালকদের মারধর করে ছিনতাইয়ের অভিযোগও রোজ রোজ পাওয়া যাচ্ছে। ইংরেজবাজারের মহদিপুর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র দিয়ে দৈনিক চারশোরও বেশি পণ্য বোঝাই গাড়ি চলাফেরা করে। এমনকী, বাংলাদেশ থেকেও শতাধিক গাড়ি এ পার বাংলায় আসে। ফলে দিনভর এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। আর প্রচুর গাড়ি রাজ্যের বাইরে থেকেও এখানে পণ্য রফতানির জন্য আসে। সেই সুযোগে এখানে তোলাবাজদের রমরমা বাড়ছে বলে অভিযোগ। রাস্তার উপরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ট্রাকচালকদের কাছে টাকা আদায় করা হত। আর টাকা না দিলেই চলত মারধর। অভিযোগ, দিনের বেলা এমন ঘটনা তেমন না ঘটলেও, সন্ধ্যা নামতেই এই সীমান্ত দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়, ফাঁকা জায়গায় ট্রাক চালকদের গাড়ি থামিয়ে মারধর করে সর্বস্ব লুঠ করে পালায় দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

সপ্তাহ খানেক আগে মহদিপুর এলাকায় এক ট্রাক চালকের মাথা ফাটিয়ে সর্বস্ব ছিনতাই করে পালায় দুষ্কৃতীরা। প্রসঙ্গত, বর্ধমানের মেহেদি বাগানের বাসিন্দা বালকার সিংহ পেঁয়াজ বোঝাই লরি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল মহদিপুর আন্তর্জাতিক সীমান্ত কেন্দ্রে। সেই সময় চার জনের এক দুষ্কৃতী দল আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মারধর করে তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। সেই সময় মহদিপুর এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল ইংরেজবাজার থানায়। তারপরেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। মহদিপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়শন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কেন্দ্রে এমন ঘটনা রোজকার।

সেই তোলাবাজি রুখতেই পিয়াসবাড়ি ফাঁড়ি ও ইংরেজবাজার থানার দুই এএসআই নেতৃত্বে সাত পুলিশ কর্মী এলাকায় টহলদারি চালাচ্ছিলেন। মহদিপুরের পিয়াসবাড়ির কাছে ফাঁড়ি থেকে ১০০ মিটার দুরে প্রাণজিৎ কুমার বাবু দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় একটি গাড়িতে করে সাত আটজনের একটি দল বাঁশ দিয়ে প্রাণজিৎ বাবুর বাঁ হাতে আঘাত করে। তাঁর বাড়ি ইংরেজবাজারের ঝলঝলিয়া এলাকায়। এই ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় এই সড়কে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের হামলার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, একটি দুষ্কৃতী চক্র গাড়ি নিয়ে ওই রুটে ছিনতাই এর মতো ঘটনা ঘটায়। এ দিন গাড়ি সমেত তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি মহদিপুরের খাসিমারি, পিয়াসবাড়ি, রামকেল এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে গৌতম ঘোষ, বাপি ঘোষ মুল পান্ডা। আর তাদের মাথায় রয়েছে কালু ঘোষ নামে এক দুষ্কৃতী। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই, তোলাবজি সহ একাধিক মামলা রয়েছে। উদ্ধার হওয়া গাড়িটি তারই বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। আর ওই গাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। কালুর হদিশ পেতে বাপি ও গৌতমকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সুপার প্রসূনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় নজরদারি আরও বাড়িনো হবে। মূল অভিযুক্তের খোঁজে এলাকায় নিয়মিত তল্লাশি চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন