রুপোলি পর্দায় এমনটা দেখা যায়৷ এ বার বাস্তবেও তার সাক্ষী থাকল জলপাইগুড়ি৷
আশি কিলোমিটার দূরে থাকা মেয়েকে খুঁজে পেতে বাবা-মায়ের সময় লাগল পুরো ন’টি বছর। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির অনুভব হোমে একে অপরকে দেখে প্রথমে কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তিন জনের চোখই ভাসল জলে। পর ক্ষণেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন হাউ হাউ করে।
হোমের কর্মী ও অন্য আবাসিকদের চোখেও তখন জল৷ কারণ, নিখোঁজ হওয়ার পর ন’ বছরের মধ্যে আট বছর তো এই হোমেই কেটেছে ১৭ বছরের কিশোরীর৷ তারপরে এমন নাটকীয় মিলন। বাস্তবে যে এমনটা হয়, সেটাও যেন ভাবতে পারছিলেন না কেউ৷
হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশোরীর বাড়ি আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটার শিয়ালডাঙা গ্রামে৷ তার বাবা-মা দিন মজুরি করেন৷ কিশোরীর দাদু এক সময় দিল্লিতে দিন মজুরি করতেন৷ সেই সূত্রেই ন’বছর আগে নাতনিকে ঘোরাতে নিয়ে যান তিনি৷ কিশোরীর বয়স তখন আট বছর৷ কিন্তু দিল্লির কাছাকাছি ট্রেন থেকে হারিয়ে যায় সে৷ তার পর বছর খানেক সেখানকারই একটি হোমেই ঠাঁই হয়েছিল কিশোরীর৷ কিন্তু ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারছে দেখে সেখান থেকে তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়৷ আট বছর আগে কলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে অনুভব হোমে পাঠানো হয় তাকে৷ তখন থেকে এখানকার বাসিন্দা ওই কিশোরী।
অনুভব হোম থেকেই তাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়৷ বর্তমানে শহরের একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে সে৷ হোমের সুপার ডালিয়া মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের এখানে আসার পর ওকে বাড়ির কথা জানতে চাওয়া হলেই শুধুমাত্র দলসিং পাড়া শব্দটি বলতো৷ আমরা নানাভাবে সেখানে খোঁজার চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু লাভ হয়নি৷ আচমকাই দিন পনেরো আগে কিশোরী ওর বাবার ডাক নাম ও গ্রামের নাম বলতে পারে৷’’ হোম সূত্রের খবর, তখনই ওই এলাকার এক সমাজসেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো বিষয়টি জানানো হয়৷ এবং তিনিই শেষ পর্যন্ত কিশোরীর বাবা-মায়ের সন্ধান পান৷
কিশোরীর বাবা-মার কথায়, ‘‘ওর দাদুর সঙ্গে দিল্লিতে যাচ্ছিল৷ রাস্তায় হারিয়ে যায়৷ তারপর অনেক খুঁজেছি৷ কিন্তু মেয়েকে পাইনি৷ আর কোনদিন ওকে খুঁজে পাব ভাবতেও পারিনি৷ তবুও মন্দিরে মন্দিরে মানত করে যাচ্ছিলাম৷ শেষ পর্যন্ত ভগবান আমাদের দিকে তাকিয়েছেন৷’’
মেয়ে শহরের ভাল স্কুলে পড়াশোনা করে জানতে পেরে বাবা-মা চাইছেন তাকে হোমে রেখেই পড়াশোনাটা করাতে৷ কিন্তু হোমের এক কর্তা জানান, সিডব্লিউসি এমন নির্দেশ দিলে তবেই সেটা সম্ভব৷ কিন্তু সেই নির্দেশ না মেলায় এ দিন বাবা-মায়ের সঙ্গেই বাড়ির পথে রওনা হয় কিশোরী৷