মৃত্যু ঘিরে রহস্য

নিখোঁজ ডিওয়াইএফ কর্মীর দেহ মিলল

তিনদিন আগে নিখোঁজ হওয়া ডিওয়াইএফ কর্মীর মৃতদেহ মিলল শিলিগুড়ির কাছে ফুলবাড়ির মহানন্দা ক্যানেলে। শনিবার সকালে তার দেহটি এক নম্বর ক্যানেলের কাছে ভাসতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০২:৩৬
Share:

তিনদিন আগে নিখোঁজ হওয়া ডিওয়াইএফ কর্মীর মৃতদেহ মিলল শিলিগুড়ির কাছে ফুলবাড়ির মহানন্দা ক্যানেলে। শনিবার সকালে তার দেহটি এক নম্বর ক্যানেলের কাছে ভাসতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়ে‌ছে, মৃত যুবকের নাম জয়ন্ত সাহা (২৬)। তিনি শিলিগুড়ির অরবিন্দপল্লির বাসিন্দা। মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তের উপরে নির্ভর করলেও প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে করছে পুলিশ। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের আইপিএল বেটিংয়ের নেশা ছিল। এর আগেও বেটিংয়ে অর্থ হারিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। এবারেও তেমন কিছু হয়ে থাকতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘আমরা সব রকম সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রাখছি। কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখছি।’’

মৃত জয়ন্ত ডিওয়াইএফের ইউনিট সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি ক্রিকেট বেটিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। গত বছর বেটিংয়ে অর্থ লগ্নি করে তিনি প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হেরে যান। তাঁর বাবা ও দাদা সেই টাকা মিটিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁকে বকাবকিও করা হয়। ভবিষ্যতে এমন ক্রিকেট জুয়ায় যাতে না জড়িয়ে পড়েন সে ব্যপারে সতর্কও করা হয়। এবারও বাড়িতে না জানিয়েই সম্ভবত ফের বাজি ধরে ফেলেছিলেন। তাতেও প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা হেরে যান। বাড়িতে বলার জায়গা ছিল না। তাই আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছে বন্ধুরাও।

Advertisement

ডিওয়াইএফের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সৌরাশিস রায়ও শিলিগুড়িতে আইপিএল জুয়ার রমরমায় ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘‘বহু অল্পবয়সি ছেলেরা চটজলদি অর্থ রোজগারের আশায় আইপিএলে অর্থ লগ্নি করছেন। পরে হেরে গিয়ে মেটাতে না পেরে বিপদ ডেকে আনছেন। আমরা এটা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’’ তবে তাঁদের কর্মী জয়ন্ত এর আগে আইপিএলে বেটিং করেছিল বলে শুনেছেন বলে জানান। তবে ক্রিকেট বেটিংয়ে যুক্ত থাকাই তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল কিনা তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে এই দফায় আইপিএলে লগ্নির ব্যপারে কিছু জানা নেই বলে জানানো হয়েছে। বাবা সন্তোষবাবু বা বোন প্রিয়ঙ্কার দাবি, ‘‘আইপিএলে এবার বাজি ধরার ব্যপারে আমরা কিছু জানি না।’’ তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানান তাঁরা। তাঁদের ধারণা জয়ন্তকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু কেন এই অনুমান তা নিয়ে সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

গত বুধবার সকালে বাড়ি থেকে রোজকার মত কাজে যাচ্ছেন বলে খাওয়াদাওয়া করে বাইক নিয়ে বের হন জয়ন্ত। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কালেকশন এজেন্টের কাজ করতেন। ব্যাঙ্কেও গিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করে শিলিগুড়ি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর বাবা সন্তোষবাবু। তিনি পুরনো লোহালক্কড়ের ব্যবসা করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় ভক্তিনগর থানার মিলনপল্লি ফাঁড়ি এলাকার গজলডোবা এলাকায় জয়ন্তের বাইকটি লক ও দাঁড় করানো অবস্থায় পাওয়া যায়। বাইকটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ওই দিন দুপুরের পর থেকে মোবাইলও সুইচড অফ হয়ে যায়। টাওয়ার লোকেশন বিভিন্ন জায়গায় দেখালে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল।

এদিন সকালে দেহটি ফুলবাড়ি ক্যানেলের এক নম্বর গেটে আটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। মৃতের পকেটে থেকে তাঁর দুটি মোবাইল, বাইকের চাবি উদ্ধার হয়েছে। সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে বেশ কিছু হাজার টাকা ও বিলিং মেশিন ছিল। সেগুলি পাওয়া যায়নি বলে তাঁর পরিবারের দাবি। এমনকী মানিব্যাগে থাকা টাকাও ছিল না বলে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন