সভাধিপতি সরলা মুর্মুর সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে মোয়াজ্জেম হোসেন। —নিজস্ব চিত্র।
মাত্র দু’দিন আগেই মালদহ জেলা পরিষদের দখল নিয়েছে তৃণমূল। আর দখল নিয়েই খোদ জেলা পরিষদের সভাধিপতির দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। বুধবার বিকেলে সভাধিপতি সরলা মুর্মূর পাশে বসে জেলা পরিষদের বাকি বিরোধী সদস্যদের ভাঙানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের পাঁচ জন ও বামেদের আট জন সদস্য আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। আর সমাজবাদী পার্টির দুই সদস্য আমাদের সমর্থন করেছেন। এখন আমাদের মোট ২১ জন সদস্য রয়েছে। খুব শীঘ্রই বাম-কংগ্রেস থেকে আরও কয়েকজন সদস্য আমাদের দলে যোগ দেবেন।’’
খাস সভাধিপতির দফতরে বসে তৃণমূলের জেলা সভাপতির এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। এমনকী, বিরোধীরা জেলা প্রশাসনে নালিশ জানানোরও হুমকি দিয়েছেন।
জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নূর বলেন, ‘‘সরকারি দফতরকে কার্যত দলীয় কার্যালয় বানিয়ে ফেলেছে তৃণমূল। তৃণমূলে জেলা সভাপতি সভাধিপতির দফতরে বসে দল পরিচালনা করতে পারেন না। এই নিয়ে আমরা জেলাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাব।’’ মৌসমের সুরে সুর মিলিয়ে এ দিনের মোয়াজ্জেম হোসেনের সাংবাদিক বৈঠককে কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তাঁর দাবি, অনৈতিক ভাবে দল ভাঙিয়ে জেলা পরিষদ দখল করল তৃণমূল। আর দখল করেই দলের জেলা সভাপতি সভাধিপতির ঘরে বসে দল পরিচালনা করছেন। বিরোধীদের ভাঙানোর ছক কষছেন। রাজ্যের মতো জেলাতেও নৈরাজ্য চলছে। যদিও বিরোধীদের এই সব অভিযোগকে আমল দিতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি। মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘বিরোধীরা কুৎসা করবেই। এখানে আমি আলোচনার জন্য এসেছিলাম। অন্য কোনও বিষয় নেই।’’ যদিও এদিনের বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি মালদগের সভাধিপতি সরলা মুর্মু। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই।’’
সোমবার কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন মালদহ জেলা পরিষদের কংগ্রেসের সভাধিপতি সরলা মুর্মু সহ ১৫ জন। যদিও সমাজবাদী পার্টির সদস্য তথা জেলা সম্পাদর মিলন দাসের দাবি, তিনি ও তাঁর দলের এক সদস্য তৃণমূলে যোগ দেননি। তাঁরা উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। এ দিন বিকেলে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সরলা দেবীর কক্ষে সদ্য দল ছেড়ে আসা সমস্ত সদস্যেরা মিলে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে হাজির হন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে চলে সভাধিপতির কক্ষে বৈঠক। বৈঠক শেষে ওই কক্ষেই সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘এখন আমাদের ২১ জন সদস্য রয়েছে। খুব শীঘ্রই সংখ্যা আরও বাড়বে।’’ জেলা পরিষদে বিরোধী কেউ থাকবেন না বলে দাবি করেন তিনি। তারপরে সভাধিপতি সরলাদেবী সহ বাকি সদস্যদের নিয়ে জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদীর কাছে গিয়ে দলবদলের বিষয়টি লিখিত ভাবে জানান মোয়াজ্জেম হোসেন। সরকারি দফতরে দলের সভাপতির দল ভাঙার হুঁশিয়ারির দেওয়ার ঘটনায় রাস্তা নেমে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে বিরোধীরা। আর এই বিষয়ে জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। বিষয়টি আমার জানা নেই।’’