কৃষ্ণেন্দুকে পদ ছাড়তে বলে চিঠি মোয়াজ্জেমের

মালদহ জেলা পরিষদের অনাস্থা পর্ব মিটতেই ইংরেজবাজার পুরসভার পুরপ্রধানের পদ থেকে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে ইস্তফা দিতে চিঠি পাঠালেন তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩৭
Share:

মালদহ জেলা পরিষদের অনাস্থা পর্ব মিটতেই ইংরেজবাজার পুরসভার পুরপ্রধানের পদ থেকে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে ইস্তফা দিতে চিঠি পাঠালেন তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে।

Advertisement

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে ই-মেল মারফত দলের সহ সভাপতি মুকুল রায় ও দলের মালদহ জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর একটি চিঠি পেয়েছিলেন তিনি। সেখানে দলের রাজ্য কমিটি কৃষ্ণেন্দুবাবুকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরানোর বিষয়টি কার্যকর করতে বলে। তিনি বলেন, ‘‘সেই চিঠির প্রেক্ষিতেই আমি এ দিন কৃষ্ণেন্দুবাবুকে ওই পদ ছাড়ার ব্যাপারে লিখিত ভাবে নির্দেশ পাঠিয়েছি।’’ এ দিকে কৃষ্ণেন্দুবাবু বর্তমানে কলকাতায় রয়েছেন। তিনি ফোনে বলেন, ‘‘আমি আগেও বলেছি যে ওই ধরনের কোনও নির্দেশ থাকলে তা দলের রাজ্য কমিটির মুখপাত্র ঘোষণা করতেন। কিন্তু তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। মোয়াজ্জেমবাবু নতুন কোনও নির্দেশ পেয়েছেন কি না জানি না, তবে আমি এখনও বলছি, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি বলেন তবে আমি সরে যাব।’’

কৃষ্ণেন্দুবাবুকে পুরপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ তারিখ। সে দিন মালদহ জেলা পরিষদের সাত সদস্যের বিরুদ্ধে অপসারণে তলবি সভা ডেকেছিল কংগ্রেস ও সিপিএম জোট। সেই তলবি সভা পাশ করাতে জোটের ৩৪ জনের সমর্থন দরকার ছিল। কিন্তু বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-সিপিএমের সমর্থনে জেতা ইংরেজবাজারের নির্দল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ সেদিন শেষ মূহূর্তে সভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেদিনই তৃণমূলের জেলা সভাপতি নীহারবাবুকে দলে নেওয়া হল বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

কিন্তু নীহারবাবুর শর্ত ছিল যে, ইংরেজবাজার পুরপ্রধানের পদ থেকে কৃষ্ণেন্দুবাবুকে সরাতে হবে। সে দিনই সন্ধেতে মোয়াজ্জেম হোসেন ঘোষণা করেন, কৃষ্ণেন্দুবাবুকে সরানোর ব্যাপাকে দলের রাজ্য কমিটি সম্মতি দিয়েছেন এবং সেই মর্মে একটি ই মেল বার্তাও দেখান। কিন্তু মোয়াজ্জেম সেই প্রেক্ষিতে এতদিন কৃষ্ণেন্দুবাবুকে কোনও চিঠি পাঠাননি।

দলের একাংশের মতে, ২৩ ও ২৪ তারিখ জেলা পরিষদে তৃণমূলেরই আনা তলবিসভা ছিল। তার আগেই কৃষ্ণেন্দুবাবুকে সরানোর চিঠি ধরালে জেলা পরিষদে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-ও পেতে পারত, কেননা জেলা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য কৃষ্ণেন্দুর অনুগামী রয়েছেন। জেলা পরিষদের সেই তলবিসভা শেষ হয়েছে এবং সেই ই-মেলকেই হাতিয়ার করে মোয়াজ্জেম এ দিনই কৃষ্ণেন্দুবাবুকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরতে বলে চিঠি পাঠালেন। এ দিকে, বুধবার মালদহ জেলা পরিষদে হাজির থাকলেও অনাস্থার তলবিসভার ভোটাভুটিতে কিন্তু অংশ নেননি গাজোলের বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস। যদিও বৃহস্পতিবার তিনি ভোটাভুটিতে অংশ নেন। দলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোটাভুটি শুরুর আগে কংগ্রেস থেকে সদ্য তৃণমূলে নাম লেখানো জেলা পরিষদের সদস্যা মঞ্জু চৌধুরী ভোট দিতে বেঁকে বসেন।

তিনি দিপালীদেবীকেও ভোট দেওয়ার দাবি তোলেন। শেষপর্যন্ত দিপালীদেবী ভোট দেন। ফলে এ দিন ৩৫টি করে ভোটে জেলা পরিযদের একাধিক স্থায়ী সমিতির ১২ জন কংগ্রেস সদস্য অপসারিত হন। এ দিকে দিপালীদেবীর এই ভোটদানকে হাতিয়ার করে তাঁর বিরুদ্ধে দল বিরোধী আইন কার্যকর করতে উদ্যোগী হচ্ছে সিপিএম।

মালদহ জেলা সিপিএম সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি এ দিন দিপালীদেবী জেলা পরিষদে তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আমরা বিধানসভায় তাঁর সদস্যপদ খারিজের ব্যাপারে আবেদন জানাব। কারণ তিনি দলত্যাগ করেছেন এমন কোনও নথি আমাদের কাছে নেই।’’ দিপালীদেবী ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন