অদম্য জেদই অস্ত্র মৌসুমীর

তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন মৌসুমিও। আজ সেই মৌসুমীই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হবিবপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৫:২৭
Share:

লড়াকু: মৌসুমী সরকার। নিজস্ব চিত্র

কথা বলতে পারেন না। শুনতেও পান না তিনি। জন্ম থেকেই এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গেই মৌসুমী সরকারের বসবাস। কিন্তু পড়ার অদম্য জেদের কাছে হার মেনেছে এইসব বাধা। মেয়েকে আর পাঁচজন স্বাভাবিক মেয়ের মতোই বড় করে তোলার পণ করেছিলেন তাঁর বাবা-মা। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন মৌসুমিও। আজ সেই মৌসুমীই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।

Advertisement

মৌসুমীর বাড়ি মালদহ জেলার বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা দাল্লা মধ্যপাড়া গ্রামে। সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় কলকাতায় মূক ও বধির স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করাতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ সরকার ও শর্মিলা সরকার। কিন্তু ছোটবেলায় অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে এলাকারই প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। অন্যদের মতোই তিনি বড় হয়েছেন। পাঠ্যবইয়ে চোখ বুলিয়েই তিনি পড়া মনে রাখেন। স্কুলে শিক্ষকেরা বোর্ডে যা লিখে দিতেন সেটা দেখেও মনে রাখতেন তিনি। এ ভাবেই ২০১৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা বসেন। কিন্তু সেবার তিনি অকৃতকার্য হন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। পরেরবার ফের পরীক্ষা দিয়ে সফল হন দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী।

তাঁর পরীক্ষার সিট পড়েছে বাড়ি থেকে অন্তত দশ কিলোমিটার দূরে কেন্দপুকুর হাইস্কুলে। মঙ্গলবার ইতিহাস পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে মৌসুমী হাত নেড়ে আকারে-ইঙ্গিতে জানালেন, এ দিনের পরীক্ষা ভালই হয়েছে।

Advertisement

সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথের দুই ছেলে মেয়ে। বড় ছেলে তুর্গেনিভ, সে এখন পাকুয়াহাট ডিগ্রি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁদেরই একমাত্র মেয়ে মৌসুমী। সংসারের রসদ যোগাতে রবীন্দ্রনাথবাবু শ্রমিকের কাজ করছেন সুদূর গুয়াহাটিতে। শর্মিলাদেবীই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করছেন।

শর্মিলাদেবী জানালেন, “জন্ম থেকেই মেয়ে মূক ও বধির। কিন্তু তাতে আমরা বিচলিত নই। ছেলের পাশাপাশি মেয়েকেও মানুষ হিসেবে তৈরি করতে চাই। আমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই ঠিকই,

কিন্তু যতদূর পড়তে চায় আমরা পড়াব”।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন