খুনের মামলা নয়, অবাক পুলিশই

বাইরে থেকে তালাবন্ধ থাকায়, গুমটি ঘরে আগুন লাগলেও বের হতে পারেনি দুই নাবালক। বন্ধ ঘরে দুই নাবালককে পুড়ে মরতে হওয়ার পরেও কেন দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে খুনের মামলার ধারা প্রয়োগ করা হল না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠল শিলিগুড়িতে। গত সোমবার ভোরে সেবক রোডের হোটেলে আগুনের ঘটনায় শিশু সুরক্ষা আইনে ভক্তিনগর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৬
Share:

দোকানে পুড়ে মৃত এক কিশোরের বাবা ও অন্যজনের মা। মঙ্গলবার খালপাড়া ফাঁড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

বাইরে থেকে তালাবন্ধ থাকায়, গুমটি ঘরে আগুন লাগলেও বের হতে পারেনি দুই নাবালক। বন্ধ ঘরে দুই নাবালককে পুড়ে মরতে হওয়ার পরেও কেন দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে খুনের মামলার ধারা প্রয়োগ করা হল না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠল শিলিগুড়িতে। গত সোমবার ভোরে সেবক রোডের হোটেলে আগুনের ঘটনায় শিশু সুরক্ষা আইনে ভক্তিনগর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিরও অভিযোগ, নিদেনপক্ষে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ মামলাতে রাখা উচিত ছিল। সব জেনেও পুলিশ কেন এই ধারাগুলি দেয়নি, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। ওই হোটেলে মদ বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, হোটেলে কাজ করা নাবালকদের দিয়ে মদ পরিবেশন করানো হতো। নাবালকদের দিয়ে মদ পরিবেশন করানো শিশু সুরক্ষা আইনে গুরুতর অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনের ৭৮ নম্বর ধারায় নাবালকদের দিয়ে মদ পরিবেশন করানো হলে ৭ বছর জেল হতে পারে। মদ বিক্রির অভিযোগ উঠলেও পুলিশের মামলায় তার কোনও উল্লেখ কেন নেই, তা নিয়েই রহস্য তৈরি হয়েছে।

Advertisement

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বার্মা বলেন, ‘‘সব রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সম্পূর্ণ হলেই কিছু বলা সম্ভব হবে।’’ তবে খুন বা অনিচ্ছকৃত খুনের মামলা কেন দায়ের হল না, তা নিয়ে পুলিশ কর্তাদের কয়েকজনও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘তালা ভেঙে যদি ঘরে ঢুকতে হয়, তা হলে তো খুনের মামলা দায়ের করা যেতেই পারে। তার উপরে অভিযুক্ত হোটেল মালিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’’ অন্য এক অফিসারের দাবি, ‘‘দু’জন পুড়ে মারা যাওয়ার অভিযোগ গুরুতর। তাই অভিযোগ অনুযায়ী মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা উচিত ছিল। পরে যেভাবে তদন্ত এগোবে সেই অনুযায়ী ধারা যুক্ত করা বা ধারা বাদ দেওয়া যেতে পারত।’’ শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলিরও প্রশ্ন, পুলিশ কি আগেই মামলা লঘু করতে চাইছে?

তবে ভক্তিনগর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মামলায় কর্তব্যে গাফিলতি ও অন্যের জীবন বিপদে ফেলার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই শিশু শ্রম আইন ও শিশু অধিকার সুরক্ষা আইনে মামলা করা হয়েছে। তবে মৃতদের বাবা মায়ের বয়ান অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স হলে পরে সেই ধারগুলি পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, আগুনের ঘটনার পরে দু’দিন পার হয়ে গেল, কিন্তু হোটেল মালিকের নাগাল পায়নি পুলিশ। মালিক পলাতক বলে দাবি করেন পুলিশ কমিশনার। তার বিরুদ্ধে গাফিলতি ও অন্যের জীবন বিপদে ফেলার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এ ছাড়াও বেআইনিভাবে জায়গা দখল, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি করে অভিযোগ জানাতে পারে পুলিশ। তারও কিছুই করা হয়ি বলে দাবি।

Advertisement

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রকল্প আধিকারিক শেখর সাহা বলেন, ‘‘আমরাও ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজখবর করেছি, রিপোর্টও তৈরি করেছি। যে ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশ সবই জানতে পেরেছে, তারপরেও কেন খুনের ধারা মামলায় থাকল না, তা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে শিশু কল্যাণ সমিতিকে আমরা অভিযোগ জানাব।’’ ভক্তিনগর থানা জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের আওতাধীন। জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক সুজিত সরকার বলেন, ‘‘ঘটনাক্রম অনেকরকম হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে যা যা অভিযোগ উঠেছে তাতে পুলিশকে অবশ্যই খুন না হলেও অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলার ধারা প্রয়োগ করতে হতো। তা কেন করা হল না, খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন