গ্রামবাসীদের সঙ্গে ধান কেটে ফিরছেন বিধায়ক অশোক লাহিড়ি। — নিজস্ব চিত্র।
অতি প্রাচীন কাল থেকেই পয়লা অগ্রহায়ণ দিনটি নবান্নের দিন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। নতুন আমন ধানে ভরা গোলাকে সাক্ষী রেখে গ্রামবাংলা মেতে ওঠে কৃষি-প্রজননের এই সুপ্রাচীন উৎসবে। কৃষিপ্রধান দেশে এই উৎসবের রেওয়াজ আজও অম্লান। সেই পরিচিত দৃশ্যেরই দেখা মিলল দক্ষিণ দিনাজপুরে। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় সূর্য ডোবার পর। যদিও প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় সকাল থেকেই। নবান্ন উৎসবে অংশ নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ধান কাটলেন বালুরঘাটের বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়িও।
নবান্ন হল, নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে তৈরি চালের প্রথম রন্ধন উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। শহরের তুলনায় যদিও নদীমাতৃক গ্রামবাংলায় এই উৎসব চোখে পড়ে বেশি। শনিবার সকাল থেকেই চরিত্রগত ভাবে সম্প্রদায়-নিরপেক্ষ নবান্ন উৎসব নিয়ে উৎসাহে ফুটছে দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ গোটা রাজ্য। গ্রামবাংলার চিরাচরিত এই হৈমন্তিক উৎসবে এ বার অংশ নিলেন বালুরঘাটের বিধায়ক তথা অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ি। শনিবার সকালে বালুরঘাট লাগোয়া ভাটপাড়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ভুসলায় রীতি মেনে প্রায় এক কিলোমিটার পথ ধানখেতের মধ্যে দিয়ে হেঁটে নির্দিষ্ট জমিতে পৌঁছন অশোক। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বন্ধু সূর্য মার্ডি। তার পর ওই নির্দিষ্ট জমি থেকে ধান কেটে মাথায় করে সূর্যের বাড়িতে নিয়ে আসেন বিধায়ক। সেখানেই শঙ্খ এবং উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে ধানের বোঝা মাথায় নেওয়া অশোককে বরণ করে নেন স্থানীয় মহিলারা।
কৃষিপ্রধান বঙ্গভূমির উৎসব নবান্নে অংশ নিতে পেরে খুশি বিজেপি বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘এখানে আসতে পেরে আমি ধন্য হয়েছি। একটা সময় এই এলাকাতেই আমি ধানগাছের চারা পোঁতার কাজ করেছিলাম। এ বার নবান্নের অনুষ্ঠানে ধান কেটে মাথায় করে নিয়ে এলাম। চমৎকার লাগল। আমরা মুখে ইকোলজিক্যাল ব্যালান্সের কথা বলি, জনজাতিদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বন্ধুর বাড়িতে এসেছি নবান্ন উৎসব দেখব বলে। এখনও পর্যন্ত যতটুকু দেখলাম, আমি মুগ্ধ।’’
যদিও বিধায়কের ধান কাটাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল বলেন, ‘‘পুরোটাই গিমিক। আমার ধারণা, অশোকবাবু জানেন না, কী করে ধান রোপণ করতে হয় বা কাটতে হয়। বাঙালির এই বিখ্যাত উৎসবকে রাজনীতির বিষয় করে তোলার চেষ্টা করলেন বিধায়ক। যে ভদ্রলোক বালুরঘাটেই থাকেন না, তিনি এক দিন এসে ধান কেটে নবান্ন করলেন, এটা নিয়ে আমরা ভাবিত নই। তিনি আরও বেশি করে এলাকায় থাকুন, মানুষ পরিষেবা পাক। ধান কাটার ব্যাপারটাও ভাল করে শিখে নিন।’’