বেআইনি অনেক কারবারের সঙ্গেই বিভিন্ন সময়ে জড়িয়ে গিয়েছে কালিয়াচকের নাম। তা সে জাল নোটের ‘নিরাপদ পথ’-ই হোক বা গরু চোরাচালান, আফিমের কারবারই হোক বা বেআইনি অস্ত্র পাচার। সেই কারবারের মাথারা কেউ জেলে, কেউ জামিন পেয়েও এলাকায় ঢুকতে পারছে না। শূন্যস্থান পূরণের জন্য এখন উঠে আসছে নতুন লোক, মোটা টাকা কামানোর সঙ্গে যারা এখন রাজনৈতিক গুরুত্বও চাইছে। সে জন্যই শাসকদলের পঞ্চায়েতের টিকিট চেয়ে মারামারি, গুলি-মৃত্যু।
জেলার রাজনীতি সম্পর্কে একটুও যিনি ওয়াকিবহাল, তিনিই বলছেন, কালিয়াচক থানার বামনগ্রাম-মসিমপুরের জোলাকান্দিতে সোমবার রাতে যা ঘটেছে, সেটা এই প্রক্রিয়ারই ফল।
স্থানীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এত দিন অবধি জাকির শেখ, বকুল শেখ বা আসাদুল্লা বিশ্বাসরা কালিয়াচকের বিস্তীর্ণ এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এমনও অভিযোগ রয়েছে, এদের এলাকায় ভোটের বালাই ছিল না কোনও দিনই। স্থানীয় রাজনৈতিক লোকজনেরাই বলছেন, আসাদুল্লা একসময়ে ছিলেন সিপিএমে। তখন তাঁর খাসতালুক কালিয়াচকের মোজমপুরে পঞ্চায়েত ভোটে ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সব ক’টিই দখল করত বামফ্রন্ট। তিনটি পঞ্চায়েত সমিতিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতত তারা। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে আসাদুল্লাও সদলবল তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েতের ভোটে এলাকায় তৃণমূলের ঝুলি উপচে যায়।
কিন্তু গত কয়েক বছরে এঁরা সকলেই পুলিশের জালে পড়েছেন। আসাদুল্লা পরে জামিন পেলেও এলাকায় তাঁর প্রবেশ নিষেধ। ফলে নতুন লোক উঠে আসার সম্ভাবনা বাড়ছে, বলছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই। তাঁরা আরও বলছেন, হাতে যার টাকা, বন্দুক-পিস্তল, তাদের জোর স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে তারা সেই জোর খাটাতে মরিয়াও। শুধু বামনগ্রাম-মসিমপুরই নয়, সুজাপুর, গয়েশবাড়ি, জালালপুর, বাখরাবাদ-সহ কালিয়াচক ১ ও ৩ ব্লকের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে শাসকদলের প্রার্থী হতে দাবিদার একাধিক লোক।
জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতি নয়, পঞ্চায়েতে তাঁরা প্রার্থী হতে চান কেন? এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এই বাহুবলীরা একবার জিতে গেলে পুলিশ-প্রশাসন তাদের সমীহ করবে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কারবারও বাড়বে। আর এখন তো এলাকা উন্নয়নে পঞ্চায়েত প্রতি বছরে অন্তত ১০ লক্ষ টাকা সরাসরি পঞ্চায়েতের হাতেই আসে। পাঁচ বছরে যা কাজ হবে তা থেকে ‘কমিশন’ মিলতে পারে ভেবেও অনেকে উৎসাহে ফুটছেন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে কে দলের টিকিট পাবেন, সেটা প্রথমে অঞ্চলের স্ত্রিনিং কমিটি ঠিক করে। এলাকায় যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তেমন প্রার্থীকেই ব্লক টিকিট দিতে মনোনয়ন করবে। ফলে দুষ্কৃতীদের কোনওমতেই টিকিট দেওয়া হয় না।’’