বাড়িতে আমি আর আমার দুই ছেলে৷ তার মধ্যে একটি ছেলে অসুস্থ৷ আরেক ছেলে টুকটাক কাজ করলেও তাতে খুব বেশি আয় হয় না৷ আমি নিজেও খুব অসুস্থ৷ ছ’হাজার টাকা পেনশন পাই৷ তা দিয়ে কোনওমতে আমার ও ছেলের চিকিৎসা এবং সংসারটা চলে৷ তাই অসুস্থতা সত্ত্বেও সকালে একটি টোটোতে চেপে ব্যাঙ্কে আসি৷ প্রায় দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো পর মাত্র দু’হাজার টাকা তুলতে পারলাম৷ ফের অন্য দিন এসে টাকা তুলতে বললেন৷ কিন্তু বুঝতে পারছি না এত অসুস্থ শরীর নিয়ে কী ভাবে আরও এক দিন ব্যাঙ্কে এসে লাইনে দাঁড়াবো ৷
রেখা দাস, জলপাইগুড়ি
খুচরো বাড়ন্ত। তাই মাসের প্রথম দিনেই পেনশনের টাকা তুলতে সকাল ১০টাতেই স্টেট ব্যাঙ্কের মালদহ শাখার লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। বাড়ি ফিরেছি বিকেল চারটেয়। প্রবীণদের জন্য আলাদা যে লাইন সেখানে দাঁড়াই। ব্যাঙ্ক কর্তপক্ষ কোনও মাইকে কোনও ঘোষণা না করায় জানতেই পারিনি। যে সকল পেনশনার সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে এসেছিলেন তাঁরা দশ হাজার করে টাকা পেয়েছেন শুনেছি। কিন্তু তারপরে বারবার ব্যাঙ্কের লিঙ্ক ফেল হয়েছে।
অশেষ দাস, ইংরেজবাজার
বুধবার রাতে টিভিতে রির্জাভ ব্যাঙ্কের অভয়বাণী শুনলাম। বিশেষ ব্যবস্থা নেবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সকাল আটটা নাগাদ মালদহের এসবিআই এর মুল শাখায় লাইনে দাঁড়াই। ১৫ আগে অবসর নিয়েছি। এখন ঠিক মতো হাঁটতেও পারি না। লাঠি নিয়ে চলা ফেরা করতে হয়। এমন অবস্থাতে পেনশনের টাকা তুলতে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। পেনশনের টাকাতে সংসার চলে। মুদির দোকান থেকে শুরু করে সবজি, মাছ, দুধের বকেয়া রয়েছে। তাঁদেরও সংসার রয়েছে। বয়স্কদের জন্য পৃথক লাইন নেই। অন্যান্যদের সঙ্গে আমাদেরও দাঁড়াতে হচ্ছে।
অমর চক্রবতী, ইংরেজবাজার
৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পর থেকেই আচমকা একটা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। অন্য মাসে পয়লা তারিখে পেনশন না হলেও এ বার প্রবীণদের কথা ভেবে কিছু ব্যবস্থা হবে বলে আশায় ছিলাম। তাই সকালে খোঁজখবর নিতে বাড়ি থেকে বেরোই। পেনশনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বই পকেটে পুরে নিই। কিন্তু এ মাসেও পেনশনের বরাদ্দ আসেনি জানার পর ওই ব্যাঙ্কে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। ৭৮ বছর বয়সে এমন হ্যাপা কার ভাল লাগে। প্রায় একই অবস্থা অন্যদের।
গুণেন্দ্রচন্দ্র মৈত্র, কোচবিহার
দু’দিন ধরে ব্যাঙ্কের লাইনে দাড়িয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। স্ত্রীর পেনশনের টাকা তুলতে এসেছিলাম একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। বুধবার দিন ভর লাইনে ছিলাম। পরে জানানো হয়, ব্যাঙ্কে টাকা নেই। খালি হাতে ফিরি। টাকার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে লাইনে দাঁড়াই। সকাল দশটার সময় ব্যাঙ্কের ম্যানেজাররা জানান, ব্যাঙ্কে টাকা নেই। ঘরে মাত্র দুই তিনশো টাকা রয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না পেলে কি ভাবে খরচ চলবে বুঝতে পারছি না। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত টাকা না গ্রাহকরা পথ অবরোধ করে। আমিও রাস্তায় বসে পড়ি।
শিবু মিত্র, আলিপুরদুয়ার
প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হল লাইনে। অনেক মানুষকে তো এর থেকেও বড় লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। মন একটু হালকা হচ্ছিল সে কথা ভেবে। হঠাৎ একটা হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। ব্যাঙ্কের সদর দরজার সামনে পৌঁছে গিয়েছি। কয়েকজন পুলিশ দাঁড়ানো। পাঁচ, ছ’জন হুড়মুড় করে ঢুকে গেল। কারও মনে হয় আর তর সইছিল না। আমিও সুযোগ পেলাম। ভিতরে ঢুকে হাতে পেলাম দশ হাজার টাকা। বাকি টাকা তুলতে হলে আবার পরের দিন লাইনে দাঁড়াতে হবে। মনটা উসখুস করছে।
অমিত রবিদাস, সুটকাবাড়ি