সেতু পায়নি ক্রান্তি, নদী-জঙ্গল পেরিেয় যাতায়াত

সেতু হলে দূরত্ব কমে হত অর্ধেক। সেতু না থাকায় যে পথে যাতায়াত চলে সেই পথে আবার গভীর জঙ্গল পেরোতে হয়। সন্ধ্যার পর গাড়ি চলাচলও কমে যায়। সব মিলিয়ে মালবাজার মহকুমা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেই হিমশিম খেতে হয় মালবাজার মহকুমারই কৃষিতে সমৃদ্ধ ক্রান্তি এলাকার মানুষদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৪
Share:

চেল নদীতে সেতু নেই। পার হতে হয় নদীখাত দিয়েই। ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।

সেতু হলে দূরত্ব কমে হত অর্ধেক। সেতু না থাকায় যে পথে যাতায়াত চলে সেই পথে আবার গভীর জঙ্গল পেরোতে হয়। সন্ধ্যার পর গাড়ি চলাচলও কমে যায়।

Advertisement

সব মিলিয়ে মালবাজার মহকুমা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেই হিমশিম খেতে হয় মালবাজার মহকুমারই কৃষিতে সমৃদ্ধ ক্রান্তি এলাকার মানুষদের। আজ অবধি মালবাজার এবং ক্রান্তির মাঝে থাকা রাজাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকাধীন চেল নদীতে সেতু তৈরি হয়নি। লাটাগুড়ি এবং ওদলাবাড়ি দুই পথেই যথাক্রমে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটারের গরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং কাঠামবাড়ি, তারঘেরার গভীর জঙ্গল পেরোতে হয়। ক্রান্তি থেকে মালবাজারে আসার এই দুই পথেরই দূরত্ব প্রায় ৪২কিলোমিটার। শুধু চেল নদীতে সেতু হলে ক্রান্তির সঙ্গে মালবাজারের দূরত্ব কমে হবে ২১ কিলোমিটার। সরকারি স্তরে আশ্বাস মিললেও এখনও সেতু বিশ বাঁও জলেই ডুবে থাকায় হতাশ ক্রান্তি মালবাজারের বাসিন্দারা।

তবে শীতকালে সুসময় ফেরে ক্রান্তিতে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই চেল নদীর জল কমে আসলে গাড়ি, মোটরবাইক দিয়ে নদী পেরিয়েই শুরু হয় যাতায়াত। মার্চ পর্যন্ত এই ভাবেই দূরত্ব কমিয়ে যাতায়াত করেন এলাকার বাসিন্দারা। ধান, পাট, সব্জিতে সমৃদ্ধ ক্রান্তি এলাকার ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের এক লক্ষেরও বেশি বাসিন্দা মালবাজারে আসতে তখন নদীপথকেই ব্যবহার করেন।

Advertisement

কিন্তু নদীতে জল বাড়তেই আবার দ্বিগুণ দূরত্বে পৌছে যায় ক্রান্তি। প্রায় ৫০০ মিটার চওড়া হয়ে বয়ে যাওয়া চেল নদীতে যে বিরাট সেতুর প্রয়োজন, তার জন্যে বরাদ্দ অর্থের কথা ভেবেই বারবার পিছিয়ে এসেছে সরকারপক্ষ। বাম আমলে নদীতে সেতুর দাবি থাকলেও বরাদ্দের কোনই সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। রাজ্যে পরিবর্তনের পর ২০১৩ সালে নদী এলাকা পরিদর্শনে আসেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সেতু তৈরিতে সব রকম আশ্বাসও দিয়ে যান তিনি। এলাকায় খুশির আবহ তৈরি হয়ে যায়।

কিন্তু এরপরেই পিছু হটে সরকার। নদী ক্রান্তিতে এতটাই চওড়া যে, এখানে সেতু তৈরিতে আর্থিক বরাদ্দের কথা ভেবেই এ যাত্রাতেও পিছু হটে রাজ্য। কার্যত এরপর থেকে আর হতাশাই বাড়ে ক্রান্তি এলাকায়। ক্রান্তির জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদের সদস্য তথা সিপিএমের মালবাজার জোনাল কমিটির সম্পাদক মিন্টু রায়ের কথায়, এই বিরাট সেতু তৈরির আর্থিক ক্ষমতা জেলাপরিষদের নেই। তবে রাজ্য সরকার চাইলে সেতু তৈরি সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘তবে রাজ্য সরকারের নীরব ভূমিকায় আমরা হতাশ।’’ ক্রান্তি এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা বিজেপির প্রবীণ নেতা আবুল কালাম আজাদের কথায় চেলের সেতু চেয়ে সব মহলে আর্জি জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। মানুষের কথা ভেবেই এখানে সেতু তৈরির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শুধু রাজ্য সরকার নয় কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়া এত বড় সেতু তৈরি সম্ভব নয় বলে পাল্টা দাবি তৃণমূলের।

তৃণমূলের ক্রান্তি এলাকার নেতা তথা জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের নেতা পঞ্চানন রায়ের কথায় সেতুটি তৈরি হলে তার দৈর্ঘ্য হবে অন্তত ৭০০মিটার। তিনি বলেন, ‘‘সেতুর কথা মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় আর্থিক সাহায্য ছাড়া এই সেতু তৈরি সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন