মহকুমা গঠনের দেড় দশক বাদেও মালদহের চাঁচলে নতুন বাস টার্মিনাস গড়ে না ওঠায় বাসিন্দাদের সর্বস্তরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। গত একদশক ধরে প্রশাসনের কর্তারা নতুন টার্মিনাস গড়ার আশ্বাস দিলেও তা না হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে চাঁচলে একটি বাস টার্মিনাস রয়েছে। তার নাম কাজি নজরুল ইসলাম বাস টার্মিনাস। অভিযোগ, বেহাল ওই টার্মিনাসে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য দূরের কথা, মহকুমা সদর জুড়ে যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে ওই টার্মিনাস। বিদ্রোহী কবির নামাঙ্কিত ওই টার্মিনাস এখন নিজেই সর্বস্তরের বাসিন্দাদের ক্ষোভের নিশানা। আশ্বাস দেওয়ার পরেও কেন চাঁচলে নতুন টার্মিনাস গড়ে ওঠেনি তা নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ চাঁচলের বিধায়কও।
শহরবাসীর অভিযোগের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বিধায়ক আসিফ মেহবুবও বলেন, ‘‘নতুন টার্মিনাস না হলে সমস্যা মিটবে না। এ ছাড়া যত্রতত্র যাতে যানবাহন না দাঁড়িয়ে থাকে তা নিয়েও পুলিশ-প্রশাসনের কোনও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।’’ চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য বলেন, ‘‘কোনও যানবাহন যাতে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে না থাকে সে দিকে নিয়মিতভাবে নজর রাখা হয়। নিয়ম ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কিন্তু নতুন টার্মিনাস তৈরি নিয়ে কী ভাবছে প্রশাসন? চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, ‘‘বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানাব। উন্নয়নমূলক সভাতেও বিষয়টি তুলব।’’
মরা মহানন্দা বুজিয়ে ১৯৯৯ সালে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ওই টার্মিনাসটি গড়া হয়। তৎকালীন জেলা পরিষদের তৈরি ওই টার্মিনাস বলতে রয়েছে ছোট একটা বেহাল যাত্রীশেড। ওই শেডের তলায়, এমনকী সামনে হকাররা যেমন বসেন, তেমনই গজিয়ে উঠেছে স্থায়ী দোকানঘরও। ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে টার্মিনাসের জায়গাও এতটাই অপরিসর যে সেখানে হাতেগোনা কয়েকটা বাস দাঁড়াতে পারে। ফলে অধিকাংশ যানবাহন জাতীয় সড়কের উপর দাঁড়িয়েই যাত্রী তোলে বলে অভিযোগ। এ ছাড়া নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই টার্মিনাস চত্বর জলে-কাদায় থইথই করে। নেই শৌচাগার বা পানীয় জলের ব্যবস্থাও। আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধে হলেই অন্ধকারে ডুবে যায় টার্মিনাস চত্বর।
টার্মিনাস তৈরি হওয়ার তিন বছর বাদে চাঁচল মহকুমা গড়ে উঠেছে। ২০০১ সালে মহকুমা গঠনের পর গত দেড় দশকে যানবাহন বেড়েছে ২০ গুণেরও বেশি। ছোট বড় মিলিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে ২০০টিরও বেশি যানবাহন। বেড়েছে যাত্রীদের যাতায়াতের সংখ্যাও। ফলে প্রতিদিন সকাল থেকেই টার্মিনাস আর জাতীয় সড়ক একাকার হয়ে যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। চাঁচল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দীপঙ্কর রাম অভিযোগ করে বলেন, ‘‘নতুন একটা বাস টার্মিনাস হলে শহরে যানজটের সমস্যা কমে যাবে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সভা হলেও কাজের কাজ হয়নি।’’ চাঁচল মিনিট্রাক, ম্যাক্সি ও অটোমালিক সমিতির সম্পাদক রবি ঘোষ বলেন, ‘‘নতুন টার্মিনাস ভীষণ জরুরি। আমাদের তরফেও একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি।’’