টাকা নেই কাজও নেই, সম্বল মাড়ভাত

গ্রামে কাজ নেই। তাই টাকাও নেই হাতে। ব্যাঙ্কে একটি বই রয়েছে। সব মিলিয়ে সেখানে রয়েছে ছ’শো টাকার মতো। অসময়ে সেই টাকা তুলতে গিয়েও ফিরে এসেছেন। কারণ দীর্ঘক্ষণ ধরে বিশাল লাইনে দাঁড়ানো তাঁর সম্ভব ছিল না।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২১
Share:

আমাতি রাজভরের রান্নাঘর।—নিজস্ব চিত্র

গ্রামে কাজ নেই। তাই টাকাও নেই হাতে। ব্যাঙ্কে একটি বই রয়েছে। সব মিলিয়ে সেখানে রয়েছে ছ’শো টাকার মতো। অসময়ে সেই টাকা তুলতে গিয়েও ফিরে এসেছেন। কারণ দীর্ঘক্ষণ ধরে বিশাল লাইনে দাঁড়ানো তাঁর সম্ভব ছিল না। তাই কোনওদিন একটি বেগুনপোড়া আর রেশন থেকে পাওয়া আটার রুটি তৈরি করে খিদে মেটাচ্ছেন। কোনও দিন মাড়ভাত আর লবন। কোচবিহারের পশ্চিম ঘুঘুমারি এলাকার বাসিন্দা আমাতি রাজভরের দিন কাটছে এমন করেই।

Advertisement

বলছেন, “কেমন ভাবে যে বেঁচে আছি কী বলি। ক’দিন আগেও গ্রামের কারও না কারও বাড়িতে দিনমজুরি করে খাবার জোগাড় করতাম। ধান কাটার কাজও পেয়েছি। এখন তো কেউ কাজ দিচ্ছে না। যার ধান সে নিজেই কাটছে। একটু সাবান নিয়ে এসে যে শরীরে দেব, মাথায় একটু তেল দেব। সে সব কেনারও ক্ষমতা নেই।” তিনি জানান, তাঁর স্বামী রামকৃষ্ণবাবু অন্তত দশ দিন ঘরে বসে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শনিবার কাজের খোঁজে তিনি পাড়ি দিয়েছেন কুড়ি কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে। যদি সেখানে কিছু কাজ মেলে।

ওই গ্রামে শুধু আমাতি নন, কাজের অভাবে বিপাকে পড়েছেন বহু মানুষ। অনেকেই সকাল থেকে ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদেরই একজন রামজিত রাজভর। তিনি জানান, আট বছরের বেশি সময় ধরে কোচবিহার শহরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। এমন কোনও দিন ছিল না যে দিন কাজ হতো না। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কোনও কাজ নেই। নোট নিয়ে সমস্যা শুরুর পর কয়েকদিন পাঁচশো, হাজারের নোট দিয়ে মালিকরা কাজ সারছিলেন। এর পর থেকে কেউ আর ওই নোট নেয় না। তাই কাজ বন্ধ। তিনি বলেন, “সকাল থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়াই। তিনদিনে একদিন কাজ হয়। ২৫০ টাকার মতো মজুরি পাই। তাই দিয়ে কোনওরকম ভাবে চলছি। কখনও কখনও ওই টাকাও বাকি পড়ে যায়। জানেন? কত দিন হল মাছ খেতে পারি না। তা কেনার পয়সা নেই।” ওই গ্রামেরই আরেক যুবক কাঠের মিস্ত্রির কাজ করেন। এক সপ্তাহের বেশি কোনও কাজ পাচ্ছেন না। তাই ধান কাটার কাজের খোঁজে ঘুরে বেড়ান। তিনি বলেন, “দিনে কাজ করে যা রোজগার হয় তাই দিয়ে সংসার চলে। এখন তো কাজই পাচ্ছি না।’’

Advertisement

কোচবিহার শহর থেকে বড়জোর দশ কিলোমিটার দূরে ওই গ্রাম। গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দাই হয় কৃষিজীবী, নয় দিনমজুরের কাজ করেন। কৃষকদের কয়েকজনের জমি রয়েছে। তাঁদের জমিতেই অন্যরা মজুরের কাজ করেন। দুই সপ্তাহ ধরে গ্রামে সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কৃষক নন্দ বর্মন বলেন, “জমির ধান কাটাতে প্রতিবারই লোক নেই। এবারে হাতে টাকা নেই। ব্যাঙ্ক থেকেও টাকা তুলতে পাচ্ছি না। তাই প্রতিদিন কিছু কিছু করে নিজের ধান নিজে কাটছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন