‘‘কবি দীনেশ দাসের কাছে পুজো সংখ্যার লেখা আনতে গিয়েছিলাম বালুরঘাট থেকে কলকাতায়। তিনি দু’টি কবিতা দিয়েছিলেন। পাঁচশো টাকা সাম্মানিক দিতেই তিনি জানালেন—‘আমার একটি কবিতার মূল্য পঞ্চাশ টাকা।’ আমার থেকে নিলেন ঠিক একশোটি টাকা।’’এমন অভিজ্ঞতা ‘বালুরঘাট বার্তা’র সম্পাদক পীযুষকান্তি দেবের। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর তত্ত্বাবধানে।
শুধু কি দীনেশ দাস? এক সময় অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, অন্নদাশঙ্কর রায়, বনফুল, প্রমথনাথ বিশী, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, শঙ্কু মহারাজ, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষকুমার ঘোষ, অমিতাভ চৌধুরীর মতো বাংলা সাহিত্যের রথী-মহারথীদের লেখনিতে সমৃদ্ধ হয়েছে এই পত্রিকা। অতীতকে অনুসরণ করে এ বারও সেজে উঠেছে উত্তরের বিভিন্ন শারদ সংখ্যা।
পুজো উদ্যোক্তাদের মতোই বিভিন্ন সাময়িক পত্রের সম্পাদকেরা বহু দিন আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছেন পুজো সংখ্যার প্রস্তুতি। সংখ্যাগুলিতে উত্তরবঙ্গের কবি, সাহিত্যিকদের পাশাপাশি কলম ধরেছেন দক্ষিণবঙ্গের লেখকরাও। এমনকী কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, কেউ লন্ডন, বাংলাদেশ থেকেও লেখা পাঠিয়েছেন। তেমনই এক জন ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ উপন্যাসের লেখক অভিজিৎ সেন জানালেন, ‘‘১৯৮৪ সালে শিলিগুড়ি থেকে প্রকাশিত দৈনিক বসুমতীর শারদসংখ্যায় আমার উপন্যাস ‘হলুদ রঙের সূর্য’ প্রকাশিত হয়েছিল। ধূপগুড়ি থেকে প্রকাশিত ‘লাল নক্ষত্র’ পত্রিকার পুজো সংখ্যার জন্যও লিখেছি দু-দু’টি উপন্যাস—‘ক্রান্তি বলয়’(১৯৮৫) এবং ‘অন্ধকারের নদী’(১৯৮৬)।’’ একদা উত্তরবঙ্গবাসী বর্তমানে কলকাতানিবাসী এই লেখক উত্তরবঙ্গের পত্র-পত্রিকায় এক সময় নিয়মিত লিখেছেন। এ বার বহু দিন পর আবার শারদ সংখ্যার জন্য লিখেছেন। তাঁর গল্প ‘জেব্রাইল’ প্রকাশিত হচ্ছে মালদহের ‘রূপান্তরের পথে’ পত্রিকায়। এই পুজো সংখ্যায় এ বার থাকছে অমর মিত্র, ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের গল্প। লোকসংস্কৃতি নিয়ে লিখেছেন লীনা চাঢী। থাকছে নদী, পরিবেশ ও চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রবন্ধ। কবিতা লিখেছেন মন্দাক্রান্তা সেন, পিনাকী ঠাকুর, শ্যামলকান্তি দাশ, সুবোধ সরকার প্রমুখরা। ‘যুগলবন্দী’ নামক বিশেষ বিভাগে আলোকচিত্রের সঙ্গে থাকছে কবিতাগুলি।
নিবেদিতার সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে এ বার শারদীয়ার বিশেষ সংখ্যাটি প্রকাশ করতে চলেছে মেখলিগঞ্জের ‘অপরাজিতা অর্পণ’। নিবেদিতাকে নিয়ে পদ্য, প্রবন্ধর পাশাপাশি থাকছে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত স্বাতী ঘোষ অনূদিত ‘প্রসঙ্গ বৌদ্ধধর্ম/ভগিনী নিবেদিতা/সম্পাদনা ও টীকা প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত ও সৌমেন পাল’ বইটির সমালোচনা। সম্পাদক লক্ষ্মী নন্দীর কথায়, ‘‘বিশেষ সংখ্যাটির কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে প্রচ্ছদ পরিকল্পনা। থাকছে অবনীন্দ্রনাথ কৃত ভারতমাতার ছবিটি।’’
ধূপগুড়ি থেকে ‘প্রবাহ তিস্তা তোর্সা’র সম্পাদক কৃষ্ণ দেব জানালেন, এ বারের শারদ সংখ্যার জন্য সম্প্রতি প্রয়াত মহাশ্বেতা দেবীকে নিয়ে লেখা একটি প্রবন্ধের দরকার ছিল। সেই প্রবন্ধটি লিখেছেন আনন্দগোপাল ঘোষ। ‘মহাশ্বেতা দেবীর সৃজন লিখনে ইতিহাসের নব নির্মাণের সূচনা’ প্রবন্ধটিতে উঠে এসেছে মহাশ্বেতাদেবীর পাবিরাবিক ঐতিহ্য এবং পরম্পরাগত ভাবে প্রবাহিত প্রতিবাদী স্বরের ইতিহাস।
সেই ১৯৭৮ থেকে ফি বছর শারদ সংখ্যায় লিখছেন আনন্দগোপাল ঘোষ। এ বার পুজোয় তাঁর প্রবন্ধ সংখ্যা উনত্রিশটি। জানালেন, ‘‘এর জন্য সারা বছর ধরেই চলে গবেষণা এবং পড়াশোনার কাজ। লেখা শুরু করি জুন মাস থেকে। পত্রিকাটিতে থাকছে দার্জিলিং জেলার স্থান-নাম, মধ্য যুগে হিন্দু ধর্মের প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ক প্রবন্ধ। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবাসী কেয়া মুখোপাধ্যায় পাঠিয়েছেন ‘পুজোর ছুটির লেখালেখি’। চলবে