—নিজস্ব চিত্র।
তুমুল বিতর্কের মুখে বাতিল করা হল দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন নাথানিয়্যাল মুর্মু কলেজে ক্লাসপিছু ১০০ টাকার সাম্মানিকে অতিথি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। গত শনিবারই কলেজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে খবর করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়। তার মধ্যেই রবিবার দুপুরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় সেটি। কলেজ সূত্রে খবর, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর অতিথি শিক্ষক পদের জন্য ১০ জন আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার হওয়ায় এখন তাঁদের আবেদনও বাতিল হয়ে গিয়েছে।
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসপিছু ৩০০ টাকায় অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল চলতি বছরের শুরুতে। তার পর তপনের কলেজে ক্লাস প্রতি ১০০ টাকা শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আলোড়ন ফেলে শিক্ষা মহলে। এত ‘কম’ সাম্মানিক দিয়ে আদতে শিক্ষকদের অপমান করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে সরব হন অনেকে। কলেজ সূত্রে খবর, এর পরেই সরাসরি বিকাশ ভবন থেকে যোগাযোগ করে কৈফিয়ত তলব করা হয় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। সরকারি নির্দেশ না থাকা সত্ত্বেও কেন সরকারি অনুমোদন না নিয়ে এই ভাবে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে, তার জবাব চাওয়া হয়। যদিও বিকাশ ভবন থেকে যোগাযোগ করার বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের অধ্যক্ষ প্রণয় নারাজিনারির সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তবে কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি অমলকুমার রায় বলেন, ‘‘সরকারি আইন আমাদের জানা ছিল না। সেই কারণেই এই ভুল হয়েছিল। ভুল শুধরে নেওয়া হয়েছে। পুরনো বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হয়েছে।’’
সম্প্রতি তপন নাথানিয়্যাল মুর্মু কলেজের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রির পাশাপাশি কলেজে পড়ানোর জন্য যা যা যোগ্যতা থাকা চাই, সবই থাকতে হবে অতিথি শিক্ষকদের। তাঁরা সপ্তাহে সর্বাধিক ১৫টি করে ক্লাস করাতে পারবেন। প্রতি ক্লাসের জন্য তাঁদের সাম্মানিক হবে ১০০ টাকা। অর্থাৎ, হিসাব মতো সপ্তাহে অতিথি শিক্ষকদের রোজগার হওয়ার কথা ১,৫০০ টাকা। আর মাসে ছ’হাজার টাকা। শিক্ষক মহলের একাংশের বক্তব্য, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ শিক্ষকদের ক্লাসপিছু ৩০০-৫০০ টাকা সাম্মানিক দিয়ে পড়ানোর চল অনেক দিন ধরেই রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সাম্মানিকের অঙ্ক বৃদ্ধির কথাও বলেছে। তার পরেও কেন এত কম সাম্মানিকে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়েই। বিজ্ঞপ্তি বাতিল হওয়ার পর বালুরঘাট কলেজের অধ্যাপক দুলাল বর্মণ বলেন, ‘‘১০০ টাকায় অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দুর্ভাগ্যজনক। ১০০ টাকা সাম্মানিক নিয়োগের কথা বলে সরাসরি অপমান করা হয়েছে শিক্ষিত যুবকদের।’’
বিজ্ঞপ্তির খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগে সম্মানজনক বেতনের দাবি তুলেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার হওয়ার পর তাঁর দলের জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও হুঁশ ফিরেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের। শিক্ষিত বেকার যুবকদের অপমান করা হয়েছিল আগের বিজ্ঞপ্তিতে। আমরা আশাবাদী যে, নতুন বিজ্ঞপ্তি যখন বেরোবে, তখন শিক্ষিত বেকার যুবকদের সম্মানের কথা মাথায় রেখেই সেই বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। আমরা বার বার আন্দোলন করেছি। বলেছি, শিক্ষক নিয়োগ হোক যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে।’’ এ নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, ‘‘শুনেছি, বিজ্ঞপ্তিতে ভুল ছিল বলেই তা তুলে নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আশা করব, কলেজ কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় বার যখন বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন, তখন ভুলভ্রান্তিগুলো দেখে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন।’’