ফিরে ফিরে আসে ঘাটের কথা

আবছা আলোয় তিস্তা-তোর্সা-মহানন্দার ঘাটে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পণ, যাগযজ্ঞ, স্তব, গান পাঠের আয়োজনে সামিল হাজার হাজার পুণ্যার্থী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪১
Share:

আবছা আলোয় তিস্তা-তোর্সা-মহানন্দার ঘাটে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পণ, যাগযজ্ঞ, স্তব, গান পাঠের আয়োজনে সামিল হাজার হাজার পুণ্যার্থী। পথে পথেও জনস্রোত। বর্ষণ স্নাত ধরিত্রীর বুকে সূর্যের প্রথম আলোয় অমানিশার অবসান। আহা, এমন দৃশ্য সেই কবে মনের গভীরে গেঁথে গিয়েছে কে জানে! তাই মহালয়া এলেই উত্তরের তিন নদীর ধারের ভোরের ছবিটা চোখ বন্ধ করে দেখার চেষ্টা করি। কখনও চলেও যাই। আমার হৃদয়ের অনেকটা জায়গা জুড়েই রয়েছে আকাশবাণী। মহালয়া আর আকাশবাণীর আত্মীয়তা টের পাওয়ার সময় তো এটাই। বৎসারান্তে মা দুর্গার আগমনবার্তা ঘোষিত হয়।.আকাশবাণীর চিরন্তন অঞ্জলি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ ঘরে ঘরে। মনটা যেন হু হু করে ওঠে। যখন শুনি, ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’। এ কোনও দিন পুরানো হওয়ার নয়। যেমন পুরানো হয় না শিউলির ঘ্রাণ, কাশফুলের দোলা।

Advertisement

শরতের হালকা মেঘ আকাশে ঘোরাফেরা না করলেও, চারদিকে এখন পুজো পুজো আমেজ। ঘরভোলা মেজাজে মনটা বাইরের টানে পাড়ি দিচ্ছে। হারিয়ে যাওয়ার নেই মানায় যাত্রা শুরু করে দিয়েছে।

সময় গড়িয়ে যায়। অনেক কিছুই স্মৃতি হয়ে যায়। কিন্তু, মহালয়া পুরনো হয় না। জেগে থাকি মহালয়ার জন্য। অলৌকিক আলোর ভোরে মহানন্দার ধারে উপচে পড়া ভিড়। তিস্তার পাশেও জমায়েত।

Advertisement

নদীর পাশে সবাইকে শরতের হিমেল বাতাস ফিসফিস করে বলে যায়, মা আসছেন।

স্বর্ণকমল চট্টোপাধ্যায়, আকাশবাণীর অবসরপ্রাপ্ত ঘোষক

ভোরের আধো অন্ধকারে শিউলি ফুল কুড়োনোর ধূম। কোন বাড়িতে কী ফুল ফোটে সেটা আগে থেকে খেয়াল রাখা। তারপর শেষ রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে তা তুলে নেওয়া। কখনও ধরা পড়ে যাওয়া। অবশ্য ধরা পড়লেও ফুল চুরির দায়ে শাস্তির বদলে মিলত সস্নেহ উপদেশ। ভোরবেলায় তখন রেডিওতে শুরু হয়ে গিয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষূ’। বাড়ির বড়রা যখন এক মনে মহালয়া শুনতে ব্যস্ত, তখন ছোটদের আর ঘরে বসে থেকে কাজ কি? এখনকার ছোটরা ফুল কুড়োনোর ব্যাপারটা বুঝলোই না। অনেকের জানতেও পারবে না নারকেলের মালায় কী ভাবে মোমবাতি বসিয়ে টর্চ লাইট বানিয়ে মহালয়ার ভোরে পথেঘাটে ঘোরাঘুরি করা যায়।

সেই ভোর-ভোর পুজো মণ্ডপে গিয়ে উঁকি দেওয়ার মধ্যে একটা শিরশিরে অনুভূতি। কলেজের মাঠ পেড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে মহানন্দা নদীর ঘাটে চলে যাওয়া। একটু বেলা গড়ালে যখন বাড়ি ফিরতাম, ততক্ষণে আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের ছোট বোনেরা বাড়ির সামনের মাঠের শিউলি গাছের তলা থেকে ফুল কুড়িয়ে সাজি ভরিয়ে ফেলেছে। দুপুরে খাওয়ার পরে বিকেলে বড়দের সঙ্গে বিধান মার্কেটে গিয়ে নতুন জামা-প্যান্টের মাপ দেওয়ার পালা ছিল। নতুন কাপড় কেনা হতো। মহালয়ার গোটা দিনটাই কেমন ঘোরে কেটে যেত।

রতন বণিক, নাগরিক সংগঠনের কর্তা

আলো-আঁধারির সেই ভোরগুলি ছিল বড়ই মায়াময়। ছোটবেলায় মহালয়ার সকাল মানেই ছিল পড়ার ঘরে তালা। শুরু হয়ে যেত শিউলি ফুলের বোঁটা ছাড়িয়ে মোটা করে মালা গাঁথা। মালার লকেটটা স্থলপদ্মের। মালা গাঁথার মহড়া শুরু হতো সেই মহালয়ার ভোরেই। রেডিওতে মহালয়ার শেষ দিকটা শোনা হতো না।

সেই সময়ে ফুলের সাজি হাতে বেরিয়ে পড়তাম। আমাদের ভাইবোনদের লক্ষ্য থাকত বড় রাস্তার পাশের এক সরকারি আধিকারিকের বাংলো। অনেক স্থলপদ্ম ফুটত সেই বাংলোর চত্বরে। আমরা ফুলের সাজি ভরিয়ে ফেলতাম। ছিল অনেক শিউলি গাছও। ফুলের বিপুল সঞ্চয়ের দিকে চেয়ে মনটা ভরে উঠত। আজও মনে হয়, মহালয়ার দিন আমরা কী ভাবে যেন ভেসে বেড়াতাম। অনেক দূরে ভেসে যেতাম যেন। যেখানে উড়ে বেড়াতো নীলকণ্ঠ পাখিরা।

মধুমিতা বসু, আইনজীবী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন