জাল নোটে নাজেহাল জেলা

কিছুটা সময় চুপচাপ। কিন্তু তার পরেই ফের বোঝা যাচ্ছে মালদহে রয়েছে মালদহেই।নোট বাতিলের জেরে ধাক্কা খাবে জাল নোটের কারবার, এমন আশার কথাই শুনিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিতে প্রস্তুত মালদহের নানা এলাকায় একের পর এক জালনোট উদ্ধারের ঘটনা।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০০
Share:

রবিবার রাতে ধৃত সারিফুল শাহ।উদ্ধার হওয়া নোট। নিজস্ব চিত্র

কিছুটা সময় চুপচাপ। কিন্তু তার পরেই ফের বোঝা যাচ্ছে মালদহে রয়েছে মালদহেই।

Advertisement

নোট বাতিলের জেরে ধাক্কা খাবে জাল নোটের কারবার, এমন আশার কথাই শুনিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিতে প্রস্তুত মালদহের নানা এলাকায় একের পর এক জালনোট উদ্ধারের ঘটনা। বাজারের আসার পরে দু’মাস গড়াতে না গড়াতেই জাল হতে শুরু করেছে দু’হাজারের নতুন নোট। মাসখানেকের মধ্যেই ছটি ঘটনায় জাল দু’হাজারের নোট উদ্ধারের ঘটনায় চিন্তায় পুলিশ প্রশাসন। সপ্তাহখানেক ধরেই হাজার হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার হচ্ছে জেলার কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরে। রবিবারই গভীর রাতে বৈষ্ণবনগরের ১৮ মাইল এলাকা থেকে ৯৬ হাজার টাকার জাল নোট সমেত নদিয়ার এক কারবারিকে আটক করেছেন বিএসএফের গোয়েন্দারা। বিএসএফ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সারিফুল শাহ। তিনি নদিয়া জেলার থানাপাড়া থানার ফাজিলনগর গ্রামের বাসিন্দা। বৈষ্ণবনগর থেকে জালনোট সংগ্রহ করে নদিয়া যাবে বলে বাস ধরার জন্য ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়েছিল সারিফুল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাকে আটক করা হয়।

সোমবার দুপুরে ধৃতকে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন বিএসএফের ২৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দারা। ধৃতের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন এবং একটি আধার কার্ড উদ্ধার হয়েছে। মোবাইল ফোনের কল লিষ্ট খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কোথায় থেকে ওই যুবক নোটগুলি পেয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রবিবারের ঘটনার আগেও পাঁচ বার জালনোট উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগে বাসিন্দারা। বস্তুত, জালনোট উদ্ধারের ঘটনায় বারবার খবরে শিরোনামে উঠে এসেছে কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরের নাম। ২০১৬ সালে বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ শাখার জওয়ানেরা ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ৭০ হাজার ৫০০ টাকার জালনোট উদ্ধার করেন। মোট ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জালনোট পাচারের ঘটনায় মূল চাঁই লিটন শেখ, টাইগার শেখদের গ্রেফতার করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। জালনোট কারবারের অন্যতম পান্ডা কালিয়াচকের মোজমপুরের বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা আসাদুল্লা বিশ্বাসকেও গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এখনও সে সিআইডির হেফাজতে রয়েছে। তবে তাতেও জালনোটের বাড়বাড়ন্ত থামছে না।

Advertisement

তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তা বলেন, জালনোট কারবারের স্রেফ করিডর হিসেবে কারবারীরা জেলার সীমান্তবর্তী থানা কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরকেই ব্যবহার করছে। নোট বাতিলের তিনমাস পরে ফের জালনোটের কারবার শুরু হয়েছে ওই দুই থানা এলাকায়। গত, ১৪ ফেব্রুয়ারি কালিয়াচকের গোলাপগঞ্জ বাজার থেকে তিন হাজার টাকার জালনোট সমেত উমর ফারুক নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। ওইদিনই রাতে গোলাপগঞ্জ থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে মহব্বতপুর থেকে ‘দু’লক্ষ টাকার নতুন দুহাজারের জালনোট উদ্ধার করে বিএসএফ।

এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া নোটগুলির মধ্যে মিল রয়েছে। একই এলাকা থেকে নোটগুলি এসেছিল বলে অনুমান কর্তাদের। তবে রবিবার রাতে উদ্ধার হওয়া নোট আরও উন্নতমানের বলে দাবি বিএসএফের। বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারন নোটের কাগজের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া জালনোটের কাগজের অনেকটা মিল রয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার হওয়া জালনোটে স্বচ্ছ ভারত মিশনের চিহ্নও রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে দুটি নোটের ফারাক বোঝা সম্ভব নয়। সারিফুল বৈষ্ণবনগরের বড়ো কামাত এলাকা থেকে জালনোটগুলি সংগ্রহ করে নদিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিল।

ঘটনায় একটি বড় চক্র কাজ করছে বলে দাবি গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাদের। তাঁরা জানান, ধৃতদের দেরা করে গোটা চক্রের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন